রবিবার, ৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের ১১ জন গ্রেফতার

দেশি ও বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর অদূরে সাভারের বালিয়ারপুর মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দুর্ধর্ষ আন্তজেলা ডাকাত চক্র ‘ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনী’র মূল হোতা সর্দার শামীমসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনীর মূল হোতা শামিম ওরফে সব্দুল, আনিসুর রহমান ওরফে ঠাণ্ডা, সালাউদ্দিন, ইখতিয়ার উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, মো. জাহাঙ্গীর সরকার, সজীব ইসলাম, জীবন সরকার, স্বপন চন্দ্র রায়, মিনহাজুর ইসলাম ও মাধব চন্দ্র সরকার (২৬)। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে র‌্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩-এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা জেলার সাভার থানার বালিয়ারপুর মহাসড়কে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি পাইপগান একটি, দুটি ওয়ান শুটারগান, ছয় রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, একটি শাবলসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনীর মূল হোতা শামীম ওরফে সব্দুল ও তাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড আনিসুর ওরফে ঠাণ্ডা। তাদের নাম অনুসারে এ বাহিনীর নাম রাখা হয় ঠাণ্ডা-শামীম। এ বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও সড়কে ডাকাতি, গাছ কেটে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাত্রীবাহী বাস, গরুবাহী ট্রাক, মালবাহী ট্রাক ও বিভিন্ন মালামালের গুদামে ডাকাতি করে আসছিল। এই বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ২৫ জন।

আল মঈন বলেন, এ চক্রের কিছু সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গতিবিধির ওপর নজরদারি করে ডাকাত দলের কাছে তথ্য সরবরাহ করতেন। শামীম ও আনিসুর ওরফে ঠাণ্ডা একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। জেল হাজতে থাকার সময় তারা দেশের নানা প্রান্তের বিভিন্ন অপরাধীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। পরবর্তী সময়ে জামিনে বের হয়ে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে ডাকাত বাহিনী গড়ে তোলেন। এ ছাড়া তারা যে এলাকায় ডাকাতি করার পরিকল্পনা করেন ওই এলাকার স্থানীয় অপরাধী, মাদক কারবারি, পরিবহন শ্রমিক ও নৈশপ্রহরীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ডাকাতিই হচ্ছে তাদের মূল পেশা।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা অন্ধকার রাস্তায় ওতপেতে থাকতেন উল্লেখ করে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবে নির্ধারিত স্থানের নিকটবর্তী স্টেশনে টার্গেট বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস সম্পর্কে সংকেত দিতেন ডাকাত দলের সদস্যরা। সংকেত পাওয়া মাত্রই চক্রের অন্য সদস্যরা দ্রুত গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে রাখতেন। পরে চালক ও যাত্রীদের অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নিয়ে পালিয়ে যেতেন তারা। গ্রেফতার ইখতিয়ার উদ্দিন এই বাহিনীর অন্যতম সদস্য। তিনি পেশায় ড্রাইভার। সাইফুল পেশায় রাজমিস্ত্রি। ডাকাতি করার সময় তিনি তালা ভাঙা, দেয়াল ভাঙা, গাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ডাকাতির মালামাল বের করা এবং পরে তা বিক্রির দায়িত্ব পালন করতেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, আনিসুর ওরফে ঠাণ্ডা ২০০৪ সাল থেকে ডাকাতি করে আসছিলেন। ২০১৬ সালে শামীমের সঙ্গে তার পরিচয়ের সূত্রে তারা একসঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতেন। এ ছাড়া ঠাণ্ডা-শামীম বাহিনী তাদের ডাকাতির ধরন ও চাহিদা অনুযায়ী ভাড়ায় লোকবল সংগ্রহ করে থাকে। এই বাহিনী এরই মধ্যে গাইবান্ধা, সাভার, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল এলাকায় বহু ডাকাতি করেছে। তারা বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতারও হয়েছে। ডাকাতি থেকে প্রাপ্ত মালামাল আনিসুর ওরফে ঠাণ্ডা ও শামীম ভাগ করে নিতেন। সাম্প্রতিক সময়ে তারা বগুড়ার শেরপুর এলাকার মহাসড়কে ডাকাতির কথা স্বীকার করেন। এ ছাড়া তারা সাভারের হেমায়েতপুরে একটি ব্যাটারির কারখানায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই গ্রেফতার হন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে খন্দকার আল মঈন বলেন, শামীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সাতটি ডাকাতি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া আনিসুর ওরফে ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে পাঁচটি মামলা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর