চট্টগ্রামের সরকারি পর্যায়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল। দুপুর ২টার পর এ হাসপাতালে প্রসূতি রোগীর সেবা মিলত না। কিন্তু এবার জেনারেল হাসপাতালে প্রসূতি সেবায় নতুন আলো দেখা মিলেছে। দিনরাত সমানেই মিলছে প্রসূতি রোগীর সেবা। চলছে নরমাল ও সিজার ডেলিভারি। ২৪ ঘণ্টাই প্রসূতি সেবা পাচ্ছেন সরকারি এ হাসপাতালে।
চট্টগ্রামের শতবর্ষী এ হাসপাতালটি অনেকটা অবহেলায় পড়েছিল। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকত ১২০ থেকে ১৪০ জন। জনবল ও উপকরণ সংকটে রোগীরা বঞ্চিত হত সেবা থেকে। ২০২০ সালের মার্চে কভিড সংক্রমণ শুরুর পর এটিকে চট্টগ্রামের একমাত্র ‘ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আড়াই বছরের ব্যবধানে হাসপাতালটি এখন চট্টগ্রামে স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। পর্যায়ক্রমে যোগ হচ্ছে নানা স্বাস্থ্যসেবা ও সেবা উপকরণ। করোনার প্রকোপ শুরুর পরই বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপন করা হয় সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট, সংস্থান হয় প্রায় ৩০টি হাই ফ্লো ন্যাজল ক্যানুলা, বসানো হয় ১৮ আইসিইউ এবং ছয়টি এইচডিইউ শয্যা, প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয় অত্যাধুনিক ওয়াশিং প্ল্যান্ট এবং সর্বশেষ সংযোজন হয় বাতাস থেকে মিনিটে ৫০০ লিটার অক্সিজেন উৎপাদন সম্পন্ন ‘জেনারেটর অক্সিজেন প্ল্যান্ট’। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, দুপুর ২টার পর হাসপাতালে প্রসূতি সেবা দেওয়া সম্ভব হত না।
অনুরোধ করার পর চিকিৎসকরা রাতদিন ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছেন। গভীর রাতেও চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। গর্ভবতী মায়েদের বিনামূল্যে ক্যান্সার টেস্ট, ব্রেস্ট টেস্ট ও এইডস পরীক্ষাও করা হচ্ছে। আগামীতে সিসিইউ ও ডায়ালাইসিস বিভাগ চালু, ১০ তলা মাল্টিপারপাস ভবন ও ওয়ানস্টপ সার্ভিস সংযোজন হবে।জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট (গাইনি) শারমিন নাহার বাশার বলেন, প্রতিদিন নরমাল-সিজার মিলে ৭ থেকে ১০টি ডেলিভারি হয়। রাতে প্রসূতি রোগী আসলে তখনো জরুরি ভিত্তিতে ডেলিভারি করানো হয়। হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শওকত আল আমিন বলেন, হাসপাতালে এখন প্রসূতি সেবায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টাই প্রসূতি সেবা চলছে।
জানা যায়, ১৯০১ সালে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি অনেকটাই খুঁড়িয়েই চলছিল। সংকট আর সংকটই ছিল সঙ্গী। ২০১০ সালে এটি ১৫০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবলসহ সামগ্রিক অবকাঠামো ছিল আগের অবস্থায়। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ শুরুর পর এটি ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কার্যত এরপর থেকেই এখানে নানা সুবিধা যুক্ত করা হয়। বর্তমানে এটি চট্টগ্রামের দ্বিতীয় স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।