বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

৫২ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা আজ

রফিকুল ইসলাম রনি, রামগতি (লক্ষ্মীপুর) থেকে

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী জেলার বর্তমানে লক্ষ্মীপুরের রামগতির চরপোড়াগাছ গ্রাম পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে সেখানে তিনি গৃহহীন মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য গৃহনির্মাণের নির্দেশ দেন। তারই নির্দেশে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম শুরু হয় গৃহহীন পুনর্বাসন কার্যক্রম। এখন ২০২২ সালে এসে আজ সেই রামগতি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু রামগতিই নয়, মাগুরা ও পঞ্চগড় জেলাসহ মোট ৫২টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী।

আজ সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঁচটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে যুক্ত হয়ে ২৬ হাজার নতুন পরিবারের মাঝে নতুন ঘর হস্তান্তর করবেন এবং ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা-উপজেলা ঘোষণা করবেন তিনি। আশ্রয়ণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, আজ পঞ্চগড়ে ১ হাজার ৪১৩টি ও মাগুরায় ৯৬টি বাড়ি হস্তান্তর হবে।

পঞ্চগড় জেলায় পাঁচটি ও মাগুরা জেলায় চারটি উপজেলা রয়েছে। বাড়িগুলো হস্তান্তরের মধ্যে দিয়ে এ দুই জেলার সব কয়টি উপজেলাকেই ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

সারা দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ৬৭ হাজার ৮০০টি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে আজ হন্তান্তর হবে ২৬ হাজার ২২৯টি বাড়ি। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। আরও ৮ হাজার ৬৬৭টি বাড়ি নির্মাণাধীন রয়েছে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন আজ গৃহহীন পরিবারগুলোর কাছে হস্তান্তর করবে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চর ভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাহান পাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার জঙ্গালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি হন্তান্তর অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হবেন।

গতকাল দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, বাড়ি হস্তান্তর উপলক্ষে আয়োজনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ চলছে। বৃষ্টির মধ্যেও প্রকল্প এলাকাজুড়ে সাজ সাজ রব চলছে। বাড়িগুলোকে সাজানো হয়েছে। পাশেই সমাবেশ স্থলে সামিয়ানা টানিয়ে ভিতরে সাজ সজ্জার কাজ চলছে। এখানেই বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পটিতে ১৪২টি বাড়ি পাচ্ছেন ভূমিহীন ও গৃহহীনরা।

সেখানে উপস্থিত লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রামগতি থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছিলেন। আজ সেই উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা দেবেন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা এক অন্যরকম আবেগ ও অনুভূতি। তিনি বলেন, জেলার ৩ হাজার ২২৮টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৬৬টি পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পুরো জেলায় আরও ৪৩৬টি পরিবার বাড়ি পাবে। লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, এ এলাকায় জেলে, বেদে, ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষেরা অত্যন্ত খুশি। তাদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নতুন বাড়ি পেয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জাতির পিতার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো পুনরায় চালু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৭ সালের ২০ মে কক্সবাজার জেলার ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত মানুষের দুর্দশা দেখতে তিনি কক্সবাজার পরিদর্শন করেন এবং গৃহহীনদের আবাসনের কথা চিন্তা করে তাদের পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। এরপর শুরু হয় গৃহহীনদের জন্য ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আবার শুরু করে সেই রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো। হাতে নেন দ্বিতীয় মেয়াদের প্রকল্প ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’। এর মাধ্যমে মুজিব শতবর্ষে শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। আজ দুই জেলাসহ ৫২ উপজেলাকে ভূমিহীন ঘোষণা করা হবে।

গতকাল লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা ঘুরে সুফলভোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের চোখে মুখে আনন্দের বন্যা দেখা গেছে। চরবাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী কাজল রেখা বলেন, ‘আমি দুই ছেলে মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে এ ঘরে থাকছি। আমার স্বামী একজন জেলে। এতদিন সোনাইর চরে অন্যের বাড়িতে ছিলাম। এখন সেলাই মেশিন চালিয়ে ভালোই রোজগার করছি। স্বামী ও আমার রোজগারে সংসার ভালো চলছে। বাচ্চাদের স্কুলে পড়াতে পারছি।’

চরঠিকা এলাকায় জয় বাংলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম (৭০) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নলুদা এলাকায় নিজেদের অনেক জমিজমা ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনে সব বিলীন হয়ে গেছে। অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিলাম। নিজের ঠিকানা ছিল না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে ঘর দিয়েছেন। ঠিকানাহীন নুরুলকে ঠিকানা দিয়েছেন। শেষ বয়সে এর চেয়ে আনন্দ আর কিছু হতে পারে না।

সর্বশেষ খবর