সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
সংক্ষিপ্ত

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান বলেছেন, বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। আইএস নাম দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করার চেষ্টা হয়েছে। শোলাকিয়া ঈদগায়ে হামলা করা হয়েছে। ক্রমাগতভাবে হামলা হয়েছে। এর মধ্যেই হোলি আর্টিজানে হামলা হলো। সারা পৃথিবীর মানুষ বিশেষ করে আমেরিকা বলেছিল বাংলাদেশ শেষ হয়ে গেছে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গতকাল রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) সংকলিত ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তাদের সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামকে উগ্রবাদ সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হিসেবে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

 তবে সেটি বাংলাদেশে সম্ভব হয়নি। যেখানে সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই। এটা বিদেশ থেকে ভাড়া করা জিনিস। এদেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ জনগণ, আলেম-ওলামা, মসজিদের ইমাম, শিক্ষকদের সহযোগিতা ও সমর্থনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, সাধারণ মাদরাসা, কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও বুকে ব্যানার লাগিয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে, আমরা জঙ্গিবাদ চাই না। জঙ্গিবাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিটিটিসি এবং এটিইউ গঠন করা হয়। বাংলাদেশ যে ধর্মান্ধ রাষ্ট্র নয়, তা সারা পৃথিবীতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। যে কারণে বাংলাদেশ সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানে পরিণত হয়নি। যদিও উসকানি নিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে। তিনি বলেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থটি সব ভাষাতেই অনুবাদ করার আহ্বান জানাই। তাহলে সবাই বুঝতে পারবে ইসলাম শান্তির ধর্ম; এখানে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে এটিইউ পেশাদারিত্বের সঙ্গে জঙ্গি, চরমপন্থি দমনে কাজ করছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে সন্ত্রাস বা কারও ওপর আক্রমণের কোনো স্থান নেই। অথচ কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন প্রচুর ইসলামিক কনটেন্ট দেখা যায়। যেখানে কোনো সেন্সর নেই, কোনো মডারেটর নেই, কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে অজস্র নতুন নতুন তথ্য ঢুকছে। এর কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক তা বোঝা মুশকিল। এসবের বিরুদ্ধে ধর্মীয় চিন্তাবিদদের কথা বলতে হবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী চিন্তাবিদরা অজানা কারণে কথা বলতে চান না। যারা ইসলামী চিন্তাবিদ এবং যারা ওয়াজ-মাহফিল করেন তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেন না। ইসলামকে অপবাদ দিয়ে বলা হয়, এই ধর্মটাই হচ্ছে জঙ্গি। সারা বিশ্বে গত ৪০ বছর ধরে এ ধরনের প্রচারণা চলছে।

পুলিশ প্রধান বলেন, ইসলামকে সন্ত্রাসের ধর্ম, রক্তপাতের ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। হোলি আর্টিজান হামলার পর আমাদের দেশের অ্যাম্বাসিগুলো পরিবার ছাড়া অ্যাম্বাসি ঘোষণা করা হলো। এরপর প্রতি সপ্তাহে ঘোষণা আসতে থাকল বাংলাদেশে কারা কারা আসতে পারবে না। বিমানের মাধ্যমে তখন অনেক দেশ কার্গো বন্ধ করে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সবার সহযোগিতায় আমরা যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা হ্যান্ডেল করতে না পারতাম তাহলে দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যেত।

অনেকেই বলেছিল জঙ্গিবাদ থেকে বাংলাদেশ কখনো বেরোতে পারবে না। আল্লাহর রহমত আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে পেরেছি। আমাদের সব সময় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। জঙ্গিবাদের থ্রেট এখনো যায়নি। সারা বিশ্ব থেকে এ থ্রেট না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের দেশেও থ্রেট থাকবে। পুলিশ নীরবে-সরবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে অনেকে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে। এ জন্য ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরে কাউন্টার নেরেটিভ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ গ্রন্থের প্রয়োজন রয়েছে।

এটিইউর অতিরিক্ত আইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট একটি নবগঠিত সংস্থা। জঙ্গিবাদ দমনের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ বিরোধী সচেতনতামূলক কাজও করে থাকে এ ইউনিট। জঙ্গিবাদ বিরোধী জনসচেতনতামূলক কাজের অংশ হিসেবে কোরআন হাদিসের সঠিক তথ্য তুলে ধরে ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ গ্রন্থটি সংকলন করা হয়েছে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের গ্রান্ড ইমাম শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদঊদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ গ্রন্থে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। তিনি গ্রন্থটি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা এবং ইংরেজি ও আরবি ভাষায় অনুবাদ করে এর বহুল প্রচার করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্য অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। দেশবরেণ্য ১৫ জন আলেম, গবেষক, অধ্যাপক ও খতিব বইটির সম্পাদনা পরিষদে যুক্ত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর