শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল

মরণফাঁদ ভাঙ্গা বরিশাল-কুয়াকাটা

রাহাত খান, বরিশাল

মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল

ভাঙ্গা-বরিশাল-কুয়াকাটা ২০৫ কিলোমিটার মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। এর মধ্যে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সিঙ্গেল লেন মহাসড়কে মুখোমুখি সংঘর্ষ পর্যন্ত হচ্ছে বৈধ-অবৈধ যানের। অপ্রশস্ত মহাসড়ক, মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ যানের অসম প্রতিযোগিতা, চালকদের অদক্ষতা, দ্র্রুতগামী যানের ফিটনেস ও চালকদের পর্যাপ্ত মানসিক ও শারীরিক ফিটনেস না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞদের দাবি, মহাসড়কে মাহেন্দ্র, অটোরিকশা, নসিমন, করিমনসহ অযান্ত্রিক যান বন্ধ না হলে দুর্ঘটনার মিছিল বাড়বে। এদিকে মহাসড়কে ভারী যানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক বিশেষজ্ঞরা। দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যান চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা। গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সড়কপথে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ভাঙ্গা হয়ে বরিশাল-কুয়াকাটা পর্যন্ত মানুষ এবং যানবাহন চলাচল দ্বিগুণ বেড়েছে। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার আধুনিক এক্সপ্রেসওয়েতে অনেকটা বাধাহীনভাবে চলছে যানবাহনগুলো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২০৫ কিলোমিটার মহাসড়কে। এর মধ্যে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার মহাসড়কে ধীর এবং একই সঙ্গে দ্রুতগতির যান চলছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। এ কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। গত ২০ জুলাই বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের বাকেরগঞ্জে একটি অটোরিকশার ছয় যাত্রী নিহত হন। এর পরদিন ২১ জুলাই বরিশাল-ভাঙ্গা মহাসড়কের উজিরপুরে বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের ছয় যাত্রী নিহত হন। এর আগে ২৯ মে ভোরে একই মহাসড়কের উজিরপুরে দ্রুতগামী নৈশ বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ১১ জন যাত্রী নিহত হন। ৪ মে গভীর রাতে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের দপদপিয়ায় বাসের চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। সর্বশেষ গত রবিবার দুপুরে বরিশাল-ভাঙ্গা মহাসড়কের ছয়মাইল এলাকায় বাসের সঙ্গে মাহেন্দ্র আলফার মুখোমুখি সংঘর্ষে এক যাত্রী নিহত এবং আহত হন চারজন। এ ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘটে ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনা। মহাসড়কে কেন এত দুর্ঘটনা জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ সৌদিয়া পরিবহন বরিশাল জোনের ম্যানেজার মো. ইমাম হোসেন বলেন, এরশাদ সরকারের আমলে ১৫ ফুট প্রশস্ত বরিশাল-ঢাকা সড়ক ২৪ ফুট প্রশস্ত করে পুনর্নির্মাণ করা হয়। এরপর দীর্ঘ তিন যুগে যানবাহনের সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়লেও সড়ক প্রশস্ত হয়নি। সরু এই মহাসড়কে একই সঙ্গে চলছে থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যান এবং দ্রুতগামী বাস-ট্রাক। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর একজন চালক প্রতিদিন ঢাকা-বরিশাল তিন থেকে চারবার ট্রিপ দেয়। তারা বিশ্রাম পায় না। ঘুম চোখে গাড়ি চালায়। এতে দুর্ঘটনা ঘটবেই। মহাসড়কে যত দিন মাহেন্দ্র-অটোরিকশা-অবৈধ যান চলবে তত দিন দুর্ঘটনা রোধ হবে না বলে তিনি দাবি করেন। বরিশাল সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন বলেন, মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের ফিটনেস, চালকের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, গতিসীমা, অপ্রয়োজনীয় ওভারটেকিং এবং রোড সাইন না মানার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। জাতীয় মহাসড়কে অযান্ত্রিক যান চলাচল নিষিদ্ধ হলেও অদক্ষরা মহাসড়কে অবৈধ যান চালাচ্ছে। একই মহাসড়কে ধীর এবং দ্রুতগতির যান চলাচল করলে দুর্ঘটনা ঘটবেই। মহাসড়কে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো যাবে না বলে মনে করেন এই সড়ক বিশেষজ্ঞ। বিআরটিএর বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বরিশালে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল বেড়েছে। আমাদের রাস্তা সরু। একই সড়কে উচ্চগতি এবং নিম্নগতির যান চলাচল করছে। বর্ষায় সড়কের পাশের শোল্ডারের নরম মাটিতে গাড়ির চাকা দেবে যায়।

চালকরা রাস্তার পাশে চাকা নামায় না। মহাসড়কে অল্প জায়গায় ওভারটেকিং-ক্রসিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। বাকেরগঞ্জ এবং উজিরপুরে দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে শোল্ডারের নরম মাটির কারণে। জেলা প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্টেও এ বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন, মহাসড়কে যদি আনফিট গাড়ি চলে, চালক যদি অদক্ষ হয়, তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া না হয়, তারা যদি বেপরোয়া গাড়ি চালায় তবে তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বরিশালে মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মো. শাহ আলম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর