মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

সাগরের ইলিশে সরগরম ফিশারি ঘাট

প্রতিদিন ডেস্ক

সাগরের ইলিশে সরগরম ফিশারি ঘাট

নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরা শুরুর পর বরিশালে আসছে শত শত মণ ইলিশ। চাঁদপুর মাছঘাট সাগরের ইলিশে সরগরম, রুপালি ইলিশে রঙিন চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাট। তবে ভোলার মেঘনায় ইলিশের দেখা নেই। এনিয়ে জেলে পল্লীতে চলছে হাহাকার। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

বরিশাল : সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় সামুদ্রিক ট্রলারগুলো পটুয়াখালীর মহিপুরে ল্যান্ডিং করে আবার দ্রুত ফিরে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। আগামী কিছুদিন সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে ধারণা করছেন তারা। পোর্ট রোডের ইলিশ ব্যবসায়ী হালিম সিকদার জানান, গতকাল নদীর ইলিশ চড়া দামে বিক্রি হলেও সাগরের ইলিশ প্রতি মণ আকার ভেদে বিক্রি হয়েছে ২৪ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা। আগামীতে ইলিশের সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে বলে মনে করেন তিনি। আরেক ইলিশ ব্যবসায়ী মো. হারুন বলেন, ক্রেতাদের আকর্ষণ নদীর ইলিশে। স্থানীয়দের মধ্যে সাগরের ইলিশের কদর কম।

চাঁদপুর : স্থানীয় নদীতে ইলিশের দেখা না মিললেও সাগরের রুপালি ইলিশে সরগরম চাঁদপুরের মাছঘাট। সাগরে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই গভীর সমুদ্র ও সাগর মোহনায় ফিসিংবোটের জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। তাই চাঁদপুরের পাইকারি বাজারে বেড়েছে নামার ইলিশের সরবরাহ। নদীর পানি বৃদ্ধি ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে দক্ষিণাঞ্চল থেকে মাছঘাটে ইলিশ আসতে শুরু করেছে।

চাঁদপুর মাছঘাটের ব্যবসায়ী সম্রাট হোসেন জানান, আজ সাগরের ইলিশের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। যদিও গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ আমদানি একটু বেড়েছে। যেহেতু ইলিশের ব্র্যান্ডিং শহর চাঁদপুরে ভালো দাম পাওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন বাজারে ইলিশের চালান হয়ে থাকে। চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার (মানিক) বলেন, কিছুদিন আগে নিম্নচাপের প্রভাবে চাঁদপুর পাইকারি বাজারে দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছিল। গত দুই দিন ইলিশের আমদানি খুব কম ঘটলেও আজ দেড় থেকে ২ হাজার মণ ইলিশের আমদানি হয়েছে।

চট্টগ্রাম : ফিশারি ঘাটে শুরু হয়েছে ইলিশ উৎসব। বিক্রেতাদের চোখে-মুখে আনন্দ। সাগারের রুপালি ইলিশে ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে ফুটেছে রঙিন হাসি। তবে দাম চড়া হওয়ায় এখনো অনেকে না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। 

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশের উৎপাদন বেশি হয়েছে।

সরেজমিন, চট্টগ্রামের মাছের বৃহত্তম আড়ত ফিশারি ঘাটে গিয়ে   দেখা যায়, রুপালি ইলিশ আসছে ট্রলারে ট্রলারে। ট্রলার থেকে নামিয়ে সেগুলো আবার মিনি ট্রাকে আনা হচ্ছে আড়তে। আড়ত থেকে যাবে বিভিন্ন বাজারে। দীর্ঘদিন পর সাগরে মাছ ধরতে পেরে উৎসব শুরু হয়েছে জেলেদের মাঝে। এখন প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ২৫ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা। মাছগুলো ধরা হয়েছে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা থেকে। গত শনিবার রাতে গভীর সাগরে যাওয়া বোটগুলো ফিরে আসতে আরও অন্তত ১০-১৫ দিন লাগবে। চট্টগ্রাম নগরের নতুন ও পুরাতন ফিশারি ঘাট, কাট্টলি ঘাট, সাগরিকা রানি রাসমণি ঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় ইলিশ বেশি বিক্রি হচ্ছে।     

ফিশারি ঘাটের আড়তদার বাবুল সরকার বলেন, ইলিশ আসা মাত্র শুরু হয়েছে। তাই এখন দাম একটু বেশি। এখন যে ইলিশ আসছে সেগুলো সাগরের আশপাশ এলাকা থেকে ধরা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের মাছগুলো এলে দাম আরও কমে যাবে।

পটুয়াখালী : নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনও অর্ধশত মাছ ধরা ট্রলারে রুপালি ইলিশ নিয়ে সাগর থেকে বন্দরে ফিরেছে জেলেরা। গতকাল জেলার মহিপুর থানার মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহিপুরে প্রায় ৫০টি ট্রলার ইলিশ নিয়ে পৌঁছেছে। তাই মৎস্য বন্দরগুলোতে এখন কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে ব্যবসায়ী ও মৎস্য শ্রমিকদের মাঝে। আনন্দের জোয়ার বইছে জেলেপাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে।

ভোলা : ভোলার মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না। ভরা মৌসুমেও কাক্সিক্ষত ইলিশ না পাওয়ায় জেলেপল্লীতে চলছে হাহাকার। ধার-দেনা করে চরম দুঃখ-কষ্টে দিন চলছে। পরিবার-পরিজনের জন্য দুই বেলা দুমুঠো ভাত জোটাতে অনেকেই মাছ ধরার পেশা ছেড়ে কাজের সন্ধানে ঢাকা-চট্টগ্রাম চলে গেছেন। ভোলার রাজাপুর, ইলিশা, তুলাতলি, নাছিরমাঝি, মদনপুর, দৌলতখানসহ বিভিন্ন মাছঘাটের জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ খবর