শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

করোনাকালেও চা উৎপাদনে রেকর্ড

দেশে এ বছরই ১০০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের সম্ভাবনা

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

করোনাকালেও চা উৎপাদনে রেকর্ড

করোনাকালেও চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। চা শিল্পের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে ঝুঁঁকি নিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছিল বাগানগুলোতে। সেই সুফল মিলছে উৎপাদনে। ২০২১ সালে চায়ের উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের ১৬৭টি চা বাগান এবং ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান মিলে বছর শেষে ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল, যা চায়ের ১৬৮ বছরের ইতিহাসের সর্বোচ্চ উৎপাদন। এর আগে ২০১৯ সালে রেকর্ড উৎপাদন ছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি। এ বছরও চা উৎপাদনে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছরই দেশে ১০০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়বে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ চা বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ বছর দেশে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছরের মে পর্যন্ত দেশে মোট চা উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪৪ হাজার ৭৯ হাজার কেজি। যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চা উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ০৭ কেজি। ফেব্রুয়ারিতে ৩৩ হাজার কেজি, মার্চ মাসে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার কেজি, এপ্রিলে ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার কেজি এবং মে মাসে ৭৪ লাখ ২০ হাজার কেজি। খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বাগান সম্প্রসারণ, নতুন করে বিনিয়োগ এবং বাগান উন্নপ্রণ বাগান মালিকদের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে চা উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। চা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও বেড়েছে। যার ফলে দেশে দেশে চা উৎপাদনে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের বাগানগুলো থেকে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি। অনুকূল আবহাওয়া ও বাগান পরিচর্যাসহ কার্যকর ব্যবস্থাপনার কারণে গত অক্টোবরেই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বাগানগুলো। অক্টোবর পর্যন্ত উৎপাদন ছিল ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার কেজি। আর বছর শেষে রেকর্ড উৎপাদন হয় ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার কেজি। বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগান মালিকরা এখন পুরনো চারা উঠিয়ে নতুন চারা আবাদ করছেন। এমনকি পরিত্যক্ত জমিও চা চাষের আওতায় নিয়ে এসেছেন। উৎপাদন বাড়াতে বাগান মালিকদের বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। বাগান উন্নয়নে অধিকাংশ বাগান মালিক নতুন করে বিনিয়োগ করছেন বলে জানান কমলগঞ্জের শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রশান্ত কুমার সরকার।

 তিনি বলেন, কয়েক বছর থেকেই উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। চা বোর্ড থেকে তদারকি করা হচ্ছে। উন্নতমানের চা উৎপাদনে খরচ বেশি হয়। কিন্তু বাজারে নিম্নমানের চা বেশি থাকায় উন্নতমানের চায়ের উপযুক্ত দাম মিলছে না। তিনি অভিযোগ করেন ভারত থেকে অবৈধভাবে দেশে নিম্নমানের চা প্রবেশ করায় দেশি এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট অঞ্চলের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, উৎপাদন বাড়াতে চা বাগান মালিকরা বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়েছেন। বছরের শুরুতে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে চায়ের উৎপাদন কিছুটা কম থাকলেও বছরের শেষদিকে চা উৎপাদনের উপযোগী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন বাড়ে। জুন থেকে পর্যায়ক্রমে উৎপাদন বাড়তে থাকে। উৎপাদনের এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর ২০২২ সালে বাংলাদেশ ১০ কোটি (১০০ মিলিয়ন) কেজি চা উৎপাদনের তালিকায় স্থান করে নেবে আশা রয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২১ সালে দেশের চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার কেজি। বছর শেষে রেকর্ড উৎপাদন হয় ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার কেজি। ২০২০ সালে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার কেজি, উৎপাদন হয়েছিল ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার কেজি। ২০১৯-এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার কেজি, উৎপাদন হয় ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি। ২০১৮-এ লক্ষ্যমাত্রা ৭ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার কেজি, উৎপাদন হয় ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার কেজি। ১০১৭-এ লক্ষ্যমাত্রা ৭ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার কেজি, উৎপাদন ৭ কোটি ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার কেজি। ২০১৬-এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ কোটি ৪৫ লাখ ০০ হাজার কেজি, উৎপাদন হয় ৮ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার কেজি। ২০১৫-এ লক্ষ্যমাত্রা ৬ কোটি ৪০ লাখ ০০ হাজার কেজি, উৎপাদন ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৭৮ হাজার কেজি এবং ২০১৪-এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ কোটি ২০ লাখ ০০ হাজার কেজি, উৎপাদন ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার কেজি।

১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা-বাগানের মাধ্যমে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে চা বোর্ডের নিবন্ধিত ১৬৭টি বাগান রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯১টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, সিলেটে ১৯টি, চট্টগ্রামে ২২টি, পঞ্চগড়ে সাতটি, রাঙামাটিতে দুটি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে মোট জমির পরিমাণ ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৩৯ একর। দেশে উৎপাদিত চায়ের দুই-তৃতীয়াংশ মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে উৎপাদন হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর