রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বনাথে ঐতিহ্যের ‘পলো বাওয়া’ উৎসব

বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি

বিশ্বনাথে ঐতিহ্যের ‘পলো বাওয়া’ উৎসব

প্রতি বছরের মতো এবারও সিলেটের বিশ্বনাথে জমজমাট আয়োজনে পালিত হয়েছে ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। উৎসবে মাছ শিকারিসহ উৎসুক নারী-পুরুষের ঢল নামে। প্রতি বছর পয়লা মাঘ এ উৎসব পালন করা হয়। তবে এবার জলাশয়ে পানি কম থাকায় মাছের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় আগেভাগে এ ঐতিহ্যের উৎসব আয়োজন করা হয়। সে অনুযায়ী গতকাল সকালে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরী গ্রামের দক্ষিণের ঐতিহ্যবাহী বড়বিলে পলো বাওয়া উৎসব শুরু হয়। এতে অংশ নিতে ভোর থেকেই বিলের পাড়ে পলো হাতে জড়ো হতে থাকেন গ্রামের শৌখিন মাছ শিকারিরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় শিশু-কিশোররাও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দূরদূরান্ত থেকে আগত উৎসুক মানুষের ভিড়। বিলের চারপাশে জমজমাট হয়ে ওঠে উৎসবের আমেজ। সকাল সাড়ে ১০টায় কয়েক শ পলোর ঝপাঝপ শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে গোয়াহরী বিল এবং এর আশপাশ। আটকা পড়তে থাকে বোয়াল, কাতলা, রুই, শোল, গজার, ব্রিগেড, কালবাউশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

 ২ ঘণ্টাব্যাপী চলে আনন্দ-উল্লাসে মাছ ধরা। গোয়াহরী গ্রামের কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দা জানান, পলো বাওয়া উৎসব তাঁদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য। উৎসবের এক সপ্তাহ আগে গ্রাম পঞ্চায়েতের সভা ডেকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়। শুরু হয় ঘরে ঘরে পলো তৈরি কিংবা মেরামত। চলে পলো সংগ্রহের কাজও। উৎসবে অংশ নিতে আত্মীয়স্বজনরা গোয়াহরী গ্রামে ছুটে আসেন। বহু প্রবাসীও চলে আসেন উৎসব উদযাপন করতে। ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবটি চলে ১৫ দিন। গ্রামবাসীর ঐতিহ্য অনুযায়ী উৎসবের ১৫ দিন পর দ্বিতীয় ধাপে পলো বাওয়া হয়। এ ১৫ দিনের মধ্যে প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার বিলে হাত দিয়ে মাছ ধরা যায় এবং কেউ চাইলে ছোট ছোট জাল (হাতা জাল) দিয়ে মাছ ধরতে পারেন।

একজন শৌখিন শিকারি জানান, ‘এ বছর বিলে মাছ বেশি। বড় মাছ অত্যধিক। আমি নিজে কয়েকটি বড় মাছ শিকার করেছি। এবার বিলে নেমে তেমন কেউ খালি হাতে বাড়ি ফেরেনি।’

যুক্তরাজ্যপ্রবাসী হাসিনুজ্জামান নুরু বলেন, ‘আমাদের গোয়াহরী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী এ পলো বাওয়া উৎসব দেখতে প্রতি বছর অনেক প্রবাসী দেশে আসেন। দীর্ঘদিন পর উৎসবটিতে অংশ নিতে পেরে খুবই আনন্দিত আমি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গোয়াহরী গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গোলাম হোসেন বলেন, ‘বিশ্বনাথ উপজেলায় সবচেয়ে বড় পলো বাওয়া উৎসব গোয়াহরী বিলেই পালিত হয়। ঐতিহ্যের এ উৎসবটি যুগ যুগ টিকিয়ে রাখতে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর