সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বগুড়ায় প্রস্তুত ৬৭৯ পূজামন্ডপ

মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষ শুরু

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় প্রস্তুত ৬৭৯ পূজামন্ডপ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। প্রকৃতিতে শরৎ আসার সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালির জীবনে বেজে ওঠে উৎসবের ডাক। মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই চন্ডীতেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া। পুরাণ মতে, এদিনই দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। এ দিন থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু হয়। মহালয়া মানেই আর ছয় দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। আর এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়। ১ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হলেও মূলত কাল থেকেই পূজার্থীরা দুর্গাপূজার আগমনধ্বনি শুনতে পাবেন। দুর্গাপূজার এই সূচনার দিনটি সারা দেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপন হবে। মহালয়া উপলক্ষে বগুড়ায় মন্দিরে মন্দিরে চলছে নানা আয়োজন। যার মাধ্যমে বাঙালির আবহমানকালের উৎসবের আমেজ রূপ নিতে শুরু করেছে। মৃৎশিল্পীদের হাতের জাদুতে রং-তুলিতে ফুটে উঠছে প্রতিমার সৌন্দর্য। মৃৎশিল্পীদের পাশাপাশি ডেকোরেটর মিস্ত্রিরাও পূজামন্ডপের গেট, প্যানেল ও লাইটিংয়ের কাজে ভীষণ ব্যস্ত।

পূজামন্ডপে ভক্ত এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় থাকছে পুলিশের কঠোর নজরদারি। বগুড়া দত্তবাড়ি মন্দিরে কাজ করছেন ফরিদপুরের প্রতিমাশিল্পী শ্রী জগা পাল। তিনি জানান, তার বাবার কাছেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেখা। সেই থেকে গত ৩৫ বছর ধরে এই মন্দিরে প্রতিমা বানানোর কাজ করছেন তিনি। তিনি বলেন, মায়ের কাজ করতে খুব ভালো লাগে। এখানে টাকা-পয়সার হিসাব মুখ্য না। মায়ের রূপ অন্তরে ধারণ করে কাজ করি। পূজার এ সময়টাতে হাজার পরিশ্রমেও ক্লান্তি নেই। এ বছর বগুড়ায় ১২টি উপজেলায় ৬৭৯ মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৫০টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ২৪০টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২৮৯টি সাধারণ। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগামী পয়লা অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সে হিসাবে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবাবের দুর্গোৎসব। এ বছর দেবী দুর্গা আসছেন গজে (হাতি) চড়ে, যাবেন নৌকায় চড়ে।

বগুড়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তরুণ কুমার চক্রবর্তী জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে তার ওয়ার্ডে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে নিরাপত্তা জোরদার করতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবীরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সার্বক্ষণিক কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।

বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, দুর্গাপূজায় যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা প্রতিরোধে বগুড়ায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ মন্দিরের তালিকা করে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও পূজা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে পালন করতে মাঠে সবাই মিলে একত্রে কাজ করবেন বলে তিনি জানান।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ সহাবস্থান করেন। সবাই আমরা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শারদীয় উৎসব যেন বগুড়ায় শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একাধিক বৈঠক করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। টহল পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর