শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
বরিশাল মহানগর বিএনপি

পেছনের কাতারে সিনিয়র নেতারা

কমিটি গঠন নিয়ে তৃণমূলে গৃহদাহ

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল মহানগর বিএনপিতে গৃহদাহ চলছে। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের পাশে নেই কোনো যুগ্ম আহ্বায়ক। বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনে কর্মীর ত্যাগ নয়, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের প্রতি আনুগত্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম লিডাররা। একপেশে কমিটি করার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার মহানগর বিএনপির শোক র‌্যালিতে সামনের কাতার ছেড়ে পেছনে থেকে নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছেন সব যুগ্ম আহ্বায়ক। এদিকে ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটি বাতিল করে রাজপথে থাকা নেতা-কর্মীদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন নগরীর দুটি ওয়ার্ড বিএনপি নেতা-কর্মীরা। গত ১১ মার্চ মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করেন আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক ও সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির। ৩০ ওয়ার্ডে দল সাজাতে মহানগর বিএনপির ছয় যুগ্ম আহ্বায়কসহ সাতজনকে প্রধান করে গঠন করা হয় সাতটি সাংগঠনিক টিম। নির্দেশনা ছিল সাংগঠনিক টিম স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ওয়ার্ডের কমিটি মহানগর নেতাদের কাছে প্রস্তাব করবেন। আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব কমিটি অনুমোদন দেবেন। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কাউকে ওয়ার্ডের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করতেও বারণ ছিল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের।  গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ঘোষিত নগরীর ১৩টি ওয়ার্ড বিএনপি কমিটির ঘোষণা করেন মহানগর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব। কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম লিডাররাও জানান, ওয়ার্ড কমিটি গঠনে কর্মীর ত্যাগ নয়; আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের প্রতি কর্মীর আনুগত্যই প্রাধান্য পেয়েছে। এসব কারণে ঘোষিত ১৩টি ওয়ার্ড কমিটিতে স্বাক্ষর করেননি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার বাবুল। কমিটি অনুমোদনে স্বাক্ষর না দেওয়ার বিষয়ে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার বাবুল বলেন, ওয়ার্ড কমিটি গঠনের বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব।

 ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মনগড়া কমিটি করেছেন। রাজনৈতিক ত্যাগ বিবেচনা না করে অনুসারীদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্ব দিচ্ছেন। বিতর্কিত ওয়ার্ড কমিটি গঠনের দায় নেবেন না তিনি। এ কারণে স্বাক্ষর করেননি।

ঘোষিত কমিটিতে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বাদ দিয়ে অঙ্গ সংগঠনকে প্রাধান্য দেওয়ায় ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে গত বুধবার নগরীর সাগরদী এলাকায় ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি এবং পরদিন বৃহস্পতিবার সদর রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মিন্টু মোল্লা বলেন, এক যুগেও যারা দলের কর্মসূচিতে আসেনি তাদের ওয়ার্ড বিএনপির নেতা বানানো হয়েছে। এর বিহিত হওয়া উচিত।

মহানগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, ওয়ার্ড কমিটিতে যাদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে তাদের অনেককে তারা চেনেনও না। আসন্ন মহানগর কাউন্সিলে পক্ষে ভোট পাওয়ার জন্য আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব শুধু তাদের প্রতি যারা আনুগত্য প্রদর্শন করে তাদেরই ওয়ার্ডের নেতা বানাচ্ছেন।

ওয়ার্ড কমিটি গঠনে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করায় গত বৃহস্পতিবার মহানগর বিএনপির শোক র‌্যালিতে পেছনের কাতারে থেকে নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছেন ছয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যরা। র‌্যালির ছবিতে আহ্বায়ক ফারুক ও সদস্য সচিব জাহিদের পাশে দেখা যায়নি কমিটির কোনো সিনিয়র নেতাকে।

কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম লিডার ও মহানগর বিএনপির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান টিপু ও কে এম শহীদুল্লাহ শহিদ বলেছেন, তাদের দেওয়া নাম ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটিতে রাখা হয়নি। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব যেমন চাচ্ছেন তেমন কমিটি অনুমোদন দিচ্ছেন। এর নীরব প্রতিবাদ হিসেবে শোক র‌্যালিতে পেছনে ছিলেন তারা।

বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের ৩ দশকের একাধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে গত বছর ৩ নভেম্বর মনিরুজ্জামান ফারুককে আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্য সচিব করে মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। পরে আহ্বায়ক কমিটি পূর্র্ণাঙ্গ হয়। এই কমিটির একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্যের বক্তব্য ‘এর চেয়ে হাজার গুণ ভালো ছিল সরোয়ার ভাই’।

এ প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা উপেক্ষা হয়নি। সাবেক ছাত্র ও যুব নেতা যারা আগেই পদত্যাগ করেছে তাদের অনেককে ওয়ার্ডে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। মহানগরীর সবাই ঐক্যবদ্ধ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর