শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভোগ্যপণ্যের বাজার লাগামহীন

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ভোগ্যপণ্যের বাজার লাগামহীন

থামানো যাচ্ছে না ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি। গত এক বছরের ব্যবধানে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় কমপক্ষে ১০টি ভোগ্যপণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা অবশ্য দাম বৃদ্ধির জন্য ডলারের ঊর্ধ্বগতি, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে দায়ী করলেও ভোক্তারা সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন।

দেশের অন্যতম পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী সংগঠন খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছগির আহমদ বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাব সামলানোর আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এ সময় ডলারের বাজারও ঊর্ধ্বগতি। বেড়েছে জ্বালানি তেলের দামও। সব মিলিয়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। তাই গত এক বছর ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজার।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। তবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির হার অনেক কম।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ- ডলার সংকট, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের অজুহাতে গত এক বছরে অনেক ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। অথচ দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের কোনোটাই এ দুই দেশ থেকে আমদানি করা হয়নি। ইউক্রেন যুদ্ধ অজুহাত ছাড়া কিছুই নয়। এ ছাড়া এমন অনেক পণ্য রয়েছে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই ঊর্ধ্বগতি ছিল। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ হচ্ছে সিন্ডিকেট কারসাজি। সিন্ডিকেট কারসাজির কারণে থামানো যাচ্ছে না ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে হু হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম। এ পাইকারি বাজারে এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে চাল, ডালসহ কমপক্ষে ১০টি ভোগ্যপণ্যের দাম। মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কেজি প্রতি পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত। গত বছর অক্টোবরে চিনি মণপ্রতি ২৬৬০ টাকা বিক্রি হলেও এক বছরের মাথায় ৩০৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৩৩০০ টাকা। চালের কেজি রকম ভেদে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে। ছোলা মণপ্রতি ২০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকা। গমের মণপ্রতি বেড়েছে প্রায় ৪৫০ টাকা। বর্তমানে গম মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫২০ টাকা। সাদা মটর কেজি প্রতি ১৭ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫৬ টাকা। মসুর ডাল (অস্ট্রেলিয়া) এক বছরের ব্যবধানে কেজি প্রতি সাড়ে চার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা, মসুর ডাল (দেশি) এক বছরের ব্যবধানে ১০৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। খোলা আটা কেজি ৩৩ টাকা থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা। আদা কেজি রকম ভেদে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ১৪৮ থেকে ১৫৫ টাকা। পিঁয়াজ কেজি রকম ভেদে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪৪ টাকা। মরিচ কেজি প্রতি রকম ভেদে ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৪০০ টাকা।

ভোগ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি থাকলেও কমেছে ভোজ্য তেলের দাম। গত অক্টোবরে পাম অয়েল মণপ্রতি ৫ হাজার টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪২৫০ টাকা। একইভাবে কমেছে সয়াবিন তেলের দামও। গত অক্টোবরে সয়াবিন তেল মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ টাকা। বর্তমানে তা মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ১০০ টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর