বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
রামেক হাসপাতাল

ইনচার্জের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় বদলি চার নার্স

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড ইনচার্জের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন চার নার্সিং কর্মকর্তা। তাদের এই অভিযোগের কোনো তদন্ত হয়নি; উল্টো অভিযোগ করার পর এই চার নার্সিং কর্মকর্তাকেই ওই ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে। এই চার সিনিয়র স্টাফ নার্স হলেন- জাকিয়া সুলতানা, মো. ইব্রাহিম, মোসা. হাসনা হেনা ও রূপালী খাতুন। তারা হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বে ছিলেন। জাকিয়া, রূপালী ও হাসনা হেনা ১৫ বছর এবং ইব্রাহিম ১০ বছর এই ওয়ার্ডে ছিলেন। তারা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকেও কার্ডিওলজির ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। রূপালী খাতুন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ক্যাথ ল্যাবে ছিলেন। ক্যাথ ল্যাবের ওপর তিনি সরকারি খরচে জাপান থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। জাকিয়াকে শিশু বিভাগের ২৭ নম্বরে, রূপালীকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে, হাসনা হেনাকে নাক, কান ও গলা বিভাগের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে এবং ইব্রাহিমকে জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

 রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসাই হয় না। রোগী এলেই পাঠানো হয় ওয়ার্ডে। এই নার্সরা যে বিষয়ে দক্ষ, সে ওয়ার্ড থেকে সরানো হয়েছে শুধু ওয়ার্ডের ইনচার্জ চায়না পারভীনকে রাখার জন্য। এই চায়নার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন চার নার্সিং কর্মকর্তা। ২ অক্টোবর হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন তারা।

অভিযোগে তারা বলেন, কারণে-অকারণে ওয়ার্ড ইনচার্জ তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এ ব্যাপারে সেবা তত্ত্বাবধায়কের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেও তারা কোনো প্রতিকার পাননি। ওয়ার্ডে রোগীপ্রতি ইসিজি ফি ৮০ টাকা এবং সার্ভিস চার্জ আট টাকা। মোট ৮৮ টাকা আদায়ের বিধান থাকলেও ইনচার্জ ৯০ টাকা আদায়ে নার্সদের বাধ্য করেন। অতিরিক্ত দুই টাকা ইনচার্জ চায়না পারভীন রাজস্ব খাতে জমা না দিয়ে সব সময় নিজের কাছে রেখে দেন। কোনো নার্সিং কর্মকর্তা যদি অতিরিক্ত দুই টাকা রোগীকে ফেরত দিতে চান, তবে সেই নার্সিং কর্মকর্তাকে ইনচার্জ চায়না পারভীন বাজে ভাষায় গালাগালি করেন। তিনি বলেন, এই দুই টাকা যারা রোগীর স্বজনকে ফেরত দেবে তাদের হাত ভেঙে দেওয়া হবে।

নার্সরা আরও অভিযোগ করেন, ওয়ার্ডের রোগীদের পেসমেকার বসানো হলে কোম্পানির প্রতিনিধি রোগীপ্রতি ৫০০ টাকা করে ডিউটিরত নার্সিং কর্মকর্তাদের নাস্তা বাবদ দিয়ে থাকেন। এই টাকা নেন ওয়ার্ড ইনচার্জ। গত দুই বছরে এক দিনও ইনচার্জ নার্সদের নাস্তা করাননি। দুই বছরে প্রায় ১৬৮টি পেসমেকার স্থাপন করা হয়েছে। সেই হিসাবে চায়না পারভীন ৮৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব অভিযোগের কোনো তদন্ত করা হয়নি।

হাসপাতালের নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহাদাতুন নূর লাকি বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করা উচিত ছিল। তারপরই একটা ব্যবস্থা হতে পারত। তা না করে অভিযোগকারীদেরই সরিয়ে দেওয়া দুঃখজনক।’

চার নার্সের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে ওয়ার্ড ইনচার্জ চায়না পারভীন বলেন, ‘বিষয়টা পরিচালক স্যার সমাধান করে দিয়েছেন। আমি কোনো কথা বলব না।’

হাসপাতালের নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘পরিচালকের নির্দেশনায় ওই চার নার্সকে মৌখিকভাবে অন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।’

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘ইনচার্জ থাকলে অভিযোগকারী নার্সরা থাকতে চান না, আবার অভিযোগকারীরা থাকলে ইনচার্জ থাকতে চান না। আমাকে তো ওয়ার্ড চালাতে হবে। তাই এ সিদ্ধান্ত।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর