মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে দুর্ঘটনার শঙ্কা খুলনায়

নির্মাণত্রুটিতে শোলমারী সেতু ভারী যানবাহন চলাচলে চাপ বাড়ছে, সংস্কার হয়নি গল্লামারি পুরাতন সেতু

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে দুর্ঘটনার শঙ্কা খুলনায়

নির্মাণত্রুটি, অনিয়ম-দুর্নীতি ও দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে খুলনায় সড়কে বেশ কয়েকটি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নির্মাণত্রুটিতে মাত্র ১১ বছরের মধ্যে বটিয়াঘাটা-শোলমারী সেতু ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটি রীতিমতো কাঁপতে থাকে। এ ছাড়া ডুমুরিয়ার চরচরিয়া-শিবনগর পয়েন্টে ভদ্রা নদীর ওপর সেতুতে নির্মাণকালেই পিলার নিচু হয়ে ত্রুটি ধরা পড়ে। চুকনগরে ভদ্রার ওপর আরেকটি সেতু তলদেশ থেকে মাঝবরাবর ফাটল দেখা দেওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তার পরও ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচলে সেতু ভেঙে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। একইভাবে গল্লামারী পুরনো সেতুসহ আরও কয়েকটি সেতু জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। জানা যায়, গল্লামারী-বটিয়াঘাটা-দাকোপ-নলিয়ান সড়কে শোলমারী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ চলাকালে ২০১০ সালে মাঝনদীতে সেতুর স্প্যানের একটি গার্ডার বসে নিচু হয়ে যায়। দায়িত্বে অবহেলায় ওই ঘটনায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুজন প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করা হয়। ২০১১ সালের ৩০ জুন জোড়াতালি দিয়ে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও ১১ বছরেই তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানির ১৬ থেকে ২০ চাকার ৪০-৫০ টনের লোডবাহী গাড়ি মালামাল নিয়ে সেতু দিয়ে চলছে। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটি রীতিমতো কাঁপতে থাকে। বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি নির্মাণের শুরুতে ত্রুটি থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে-কোনো সময় ভেঙে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ একইভাবে ডুমুরিয়া উপজেলার চরচরিয়া-শিবনগর পয়েন্টে ভদ্রা নদীর ওপর সেতুতে নির্মাণকালেই ত্রুটি ধরা পড়ে। সেতুর ৬ নম্বর পিলারের তুলনায় ২ নম্বর পিলার নিচু হয়ে বসে গেছে। এতে সেতুর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া ডুমুরিয়ার চুকনগরে ভদ্রা নদীর ওপর আরেকটি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে ২০১৮ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেতু পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু বিকল্প উপায় না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই ছোটবড় যানবাহন সেতু পার হচ্ছে। যে-কোনো সময় সেতু ভেঙে পড়লে খুলনা-সাতক্ষীরার সঙ্গে যশোর জেলার মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘চার বছর আগে সেতুটির তলদেশ থেকে মাঝবরাবর ফাটল ধরলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।

 কিন্তু উদ্যোগ না নেওয়ায় সেতু চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’

এদিকে খুলনায় অপরিকল্পিত কিছু সেতুও নির্মাণ করা হয়েছে, যা জনগণের কাজে লাগছে না। এর মধ্যে কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি খালের ওপর সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় তা অব্যবহৃত রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়।

খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, বটিয়াঘাটা সেতুর নির্মাণত্রুটি নিয়ে দুদকে মামলা হয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে এটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ অথবা বিকল্প সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গল্লামারীর পুরনো সেতুটি ভেঙে সেখানে হাতির ঝিলের মতো দর্শনীয় সেতু নির্মাণের ডিজাইন করা হয়েছে। এ মাসেই নির্মাণকাজের দরপত্র দেওয়া হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর