মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সুন্দরবন দস্যুমুক্তের চার বছর আজ

সেই সাফল্যের গাথা ‘অপারেশন সুন্দরবন’

আলী আজম ও মোস্তফা মতিহার

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। মৎস্য ও বন সম্পদের প্রাচুর্যে ভরপুর এই বনভূমি। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে উপকূলীয় অধিবাসীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা। জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের আগে তাদের বড় আতঙ্ক ছিল জলদস্যু ও বনদস্যুদের উৎপাত। আজ ১ নভেম্বর, দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের চার বছর।

ডাকাতি ও অপহরণের ভয়ে কোণঠাসা ছিল এই অঞ্চলের বিভিন্ন পেশাজীবী। তবে সুন্দরবনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষা, মৎস্য ও বনজ সম্পদের সংরক্ষণ সর্বোপরি সুন্দরবনকে বাঁচাতে ২০১২ সালে র‌্যাবকে লিড এজেন্সি করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। একের পর এক র‌্যাবের দুঃসাহসিক অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জলদস্যুরা। ২০১৬ সালের ৩১ মে মাস্টার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবনের দস্যুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনে বন ও জলদস্যুতার অবসান ঘটে।

২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। সম্পূর্ণরূপে দস্যুমুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। চার বছর ধরে সেই সাফল্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে র‌্যাব।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাব ৫টি পর্বে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তা হলো- অভিযান, আত্মসমর্পণ, পুনর্বাসন, মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ও সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা। র‌্যাব প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত সুন্দরবনে ৭৭৯ জন জলদস্যু গ্রেফতার হয়। র‌্যাবের তত্ত্বাবধানে জলদস্যু পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে ‘সুন্দরবনের হাসি’ নামক একটি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। যেখানে সেলাই, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন আরও বলেন, সুন্দরবনের মৌওয়ালি, বাওয়ালি, বনজীবী এবং পর্যটকদের নিরাপত্তাকল্পে র‌্যাব তার সরব উপস্থিতি, গোয়েন্দা নজরদারি, নিয়মিত নৌ-টহল এবং হেলিকপ্টার টহল অব্যাহত  রেখেছে। গত বছর আত্মসমর্পণকারী দস্যুদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১০২টি ঘর, জিনিসপত্রসহ ৯০টি মুদি দোকান, ১২টি মাছ ধরা নৌকা, ৮টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ২২৮টি গবাদি পশু দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, র‌্যাবের দস্যুমুক্ত করার ৫টি পর্বের মধ্যে শুধু অভিযানের আলোকে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ‘অপারেশন সুন্দরবন’। গত ২৩ সেপ্টেম্বর মুক্তির পর থেকে এ ছবিটি দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক বিরল রেকর্ড অর্জন করে। টানা পাঁচ সপ্তাহ ছবিটি তার সফলতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করার পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসন ও মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়নসহ র‌্যাবের সাফল্য গাথার গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমাটি দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ড অর্জন করেছে। নিঃসন্দেহে এটি এদেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য এক বিরাট মাইলফলক।

ছবিটি দেখার জন্য প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহেই দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্মাণে আধুনিকতা ও সাসপেন্সের কারণে ছবিটি সব শ্রেণির দর্শকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। রোমহর্ষক ও গা ছম ছম করা অভিযানের গল্পগুলো নান্দনিকভাবে ছবিটিতে তুলে ধরেছেন নির্মাতা দীপংকর দীপন।

এলিট ফোর্স র‌্যাব প্রযোজিত ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- রিয়াজ, নুসরাত ফারিয়া, সিয়াম, রোশান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, এহসানুর রহমান, মনোজ প্রামাণিক, খায়রুল আলম টিপু, শতাব্দী ওয়াদুদ প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর