শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

এক বছরেও ১৬ জনের লাশ শনাক্ত করা যায়নি, হয়নি নৌ ফায়ার স্টেশন

অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ড

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের এক বছর ছিল গতকাল। গত বছরের এই দিন গভীর রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে ইঞ্জিনের ত্রুটির কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ৪৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও পাওয়া যায়নি অজ্ঞাত লাশের ডিএনএ রিপোর্ট। এ ঘটনায় এখনো ১৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও ঝালকাঠিতে স্থাপন করা হয়নি নৌ ফায়ার স্টেশন। প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নদীর মধ্যে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পুরো লঞ্চ জ্বলছিল। পরে ভাসতে ভাসতে দিয়াকুল এলাকার চরে আটকে পড়ে লঞ্চটি। জীবন বাঁচাতে যে যেভাবে পারেন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকেন। এরই মধ্যে অনেকেই পুড়ে অঙ্গার হন। ডেকের যাত্রীরা জীবন বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দিতে পারলেও কেবিনের যাত্রীরা বুঝে ওঠার আগেই পুরো লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় তারা কেবিনেই মারা যান। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহায়তায় ৩৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে নদীতে চারজন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুরান ঢাকার মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ঝালকাঠি থানায় চার মালিকসহ আটজনের নামে মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলাটি নৌ আদালতে হস্তান্তর করা হয় এবং পোড়া লঞ্চটি আদালত মালিকপক্ষের জিম্মায় দেন। বর্তমানে মামলাটি নৌ আদালতে চলমান রয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। পুড়ে মারা যাওয়া ১৬ ব্যক্তির ডিএনএ রিপোর্ট এখনো যাওয়া যায়নি। ওই রিপোর্ট পেলে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৪৭ জন মারা যাওয়ার ৪১ দিন আগে সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী নামে একটি তেলের জাহাজে অগ্নিকান্ডে  সাতজনের মৃত্যু হয়। সুগন্ধা নদীতে একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলেও নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন হয়নি। দ্রুত নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপনের দাবি জেলাবাসীর। ফারহান-৭ লঞ্চের ঘাট সুপারভাইজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ঝালকাঠি থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী অসংখ্য জাহাজ চলাচল করে। এখানে গাবখান চ্যানেল রয়েছে। এই চ্যানেল দিয়ে খুলনা, মোংলা ও কলকাতা যায় অনেক নৌযান। এ ছাড়াও বরগুনা, পাথরঘাটা, বরিশাল ও ঢাকায় পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন জরুরি হয়ে পড়েছে। ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নৌ ফায়ার স্টেশনের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এক বছর পার হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা রয়েছে, যাতে ঝালকাঠিতে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন হয়।

এতে ডুবুরি দলও থাকবে, দুর্ঘটনা হলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো যাবে। ঝালকাঠি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলা ঢাকার নৌ আদালতে চলমান রয়েছে। আমি প্রাথমিকভাবে মামলাটি তদন্ত করেছি, আলামতও জব্দ করেছি। আদালতের নির্দেশে পোড়া লঞ্চটি মালিকপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এক বছর হলেও আমরা এখনো ১৬ জনের ডিএনএ রিপোর্ট পাইনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর