চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসায় মহাসড়কের পাশে নির্মাণ করা হয় দুটি ট্রমা সেন্টার। তবে প্রয়োজনীয় জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে তা চালু করা যায়নি। কেবল ট্রমা সেন্টার দুটি নয়। তৃণমূলে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রধান কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও রয়েছে নানা সংকট-সমস্যা। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনাকালে বিভিন্ন সুবিধা যুক্ত হলেও এখানে চরম অব্যবস্থাপনায় রোগী ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী। বৃহত্তর চট্টগ্রামের চিকিৎসার ভরসাস্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালও চলছে নেই আর নেই নিয়ে। ফলে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাত চলছে খুঁড়িয়ে। পুরাতন বছর যায়, নতুন বছর আসে; তবে স্বাস্থ্য খাতের আশানুরূপ পরিবর্তন হয় না।
ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে দুটি ট্রমা সেন্টার
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়ায় ২০০৭ সালের জুনে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০১২ সালে। ২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে সেটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়নি। এখানে নেই প্রয়োজনীয় সেবা। এ ছাড়া, হাটহাজারী খাচারি রোডে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় একটি ট্রমা সেন্টার। দুটি বিশেষ কেবিন ও ১৮ সাধারণ শয্যার হাসপাতালটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল, নেই চিকিৎসা উপকরণ। ভবনে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ থাকলেও দেওয়া হয়নি কোনো আসবাবপত্র। ফলে এখানেও মিলে না কোনো চিকিৎসাসেবা। প্রায় দুই বছর হলেও এটি এখনো কেবলই একটি ভবন।চিকিৎসা উপকরণ সংকট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয়
চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স আছে। এর মধ্যে নয়টির চালক আছে, ছয়টির নেই। এসব অ্যাম্বুলেন্স আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে চালক দিয়ে চলছে। কয়েকটি উপজেলার অ্যাম্বুলেন্সের চালক স্থানীয়ভাবেও নিয়োগ দেওয়া হয়। চন্দনাইশ উপজেলায় অপারেশন থিয়েটারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। এখানকার অপারেশন থিয়েটারের সিলিং লাইটটি বাক্সবন্দি। এ নিয়ে এখানকার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ন্যাশনাল ইলেকট্র্রো মেডিকেল ওয়ার্কশপ ও ট্রেনিং সেন্টারের (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজারের কাছে অপারেশন থিয়েটার সচলে যন্ত্রপাতি দেওয়ার জন্য চিঠি লিখেন। যাতে বলা হয়, একটি ওটি টেবিল রয়েছে, তবে তা মেরামত করতে হবে। দুটি এনেসথেসিয়া মেশিনের একটি মেরামত করতে হবে। তাছাড়া, লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান/ডেলিভারি এবং অপারেশন থিয়েটারে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দানের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল নিয়োগের চাহিদা উল্লেখ করে গত ২৫ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা। এখানে দুটি অটোক্লাব মেশিন, একটি এনেসথেসিয়া মেশিন, একটি বায়োপুলার ডায়াথেরাপি ও চারটি ওটি লাইট থাকলেও সেগুলো মেরামত করতে হবে। একইভাবে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘সিজারিয়ান/ডেলিভারি এবং অপারেশন থিয়েটারে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দানে যন্ত্রপাতির মেরামত ও চাহিদা উল্লেখ করে গত ২৪ অক্টোবর সিভিল সার্জনের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। অভিন্ন চিঠি পাঠিয়েছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাও।
জেনারেল হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা
করোনা মহামারি দেখা দিলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে কভিড ডেডিকেটেড ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে এ সেবা কেন্দ্রে নানা সুবিধা যুক্ত হয়। এর মাধ্যমে সেবার পরিধি বাড়লেও অব্যবস্থাপনায় রোগীদের দুর্ভোগ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বেশি ভোগান্তি ও বিপাকে পড়তে হয় মহিলা, বৃদ্ধ ও শিশুদের। সূত্র জানায়, জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা নেন। অথচ এখানে বাথরুম আছে মাত্র একটি। তার অবস্থাও বর্ণনা করার মতো নয়। আবর্জনা ও নোংরা পানিতে ভরে থাকে এর মেঝে। থাকে পানির স্বল্পতা। এখনে নারী-পুরুষ ও শিশু সবাইকেই লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হয়।
কেবল বাথরুম নয়, বহির্বিভাগে অসুস্থ রোগীর বসার জায়গা সংকট রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে ময়লা।
হাসপাতালের সিঁড়ির কর্নারের দেয়ালে আছে পানের দাগ। সিঁড়িতে সব সময় থাকে ভিক্ষুক। ভিতরেই থাকে বাদাম বিক্রেতা। সরকারি এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটির পরতে পরতে অব্যবস্থাপনা। এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারীর কারণে এসব সমস্যা প্রকট হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।