রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চালককে হত্যা করাই ছিল ছিনতাইয়ের কৌশল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও মৌলভীবাজার থেকে ছিনতাইকারী চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশ বলছে, ওই চক্রের সদস্যরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের টার্গেট করে কোনো একটি গন্তব্যের কথা বলে সেটি ভাড়া করত। এরপর অটোরিকশাটি নিয়ে যেত পূর্বপরিকল্পিত নির্জন স্থানে। সেখানে চালকের গলা কেটে হত্যা করে লাশ লুকিয়ে রেখে অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যেত। চালককে হত্যা করাই ছিল তাদের ছিনতাইয়ের কৌশল। এভাবে হত্যার পর লাশটি উদ্ধার হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্লুলেস ঘটনা হিসেবেই থেকে যেত। অনেক সময় কোনো জায়গা থেকে তদন্ত শুরু করা হবে, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিত তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মনে।

রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় দায়ের হওয়ায় এক হত্যা মামলার তদন্তে নেমে ওই ছিনতাইকারী চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ডিবি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- খালেদ খান শুভ, টিপু, হাসানুল ইসলাম ওরফে সান, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবদুল মজিদ ও সুমন।

 শুক্রবার ও শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও মৌলভীবাজারের রাজনগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহার করা স্যুইচ গিয়ার (চাকু) ও একটি ঢালাই পাথর খন্ড উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া মোস্তফা (৩৫) নামে নিহত এক ব্যক্তির ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।

ডিবি বলছে, শুভ, টিপু ও হাসানুল যাত্রী সেজে অটোরিকশা ভাড়া করে নির্জন স্থানে নিয়ে চালককে হত্যা করে সেটি ছিনিয়ে নিত। তারা ছিনতাই করা অটোরিকশা জাহাঙ্গীর, মজিদ ও সুমনের কাছে দিত। ওই তিনজন এমনভাবে তা বিক্রি করত কেউ যাতে সন্দেহ করতে না পারে।

গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত ৮ ও ২৫ ডিসেম্বর মো. মোস্তফা ও জিহাদ নামে দুই অটোরিকশাচালকের রিকশা ভাড়া করে মো. টিপু, হাসান ও শুভ। পরে মোস্তফাকে আশিয়ান সিটি ও জিহাদকে পূর্বাচল এলাকায় নিয়ে হত্যা করে তারা। দুজনের লাশ নির্জন এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী পরিবারের দায়ের করা মামলার ছায়া তদন্তে নেমে এই চক্রের সন্ধান পায় ডিবি উত্তরা বিভাগ। চক্রের ছয় সদস্যকেই গ্রেফতার করা হয়।

নিহত মোস্তফার মা সামছুন্নাহার বলেন, ৭ ডিসেম্বর রাতে মোস্তফা অটোরিকশা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। এর ১১ দিন পর জানতে পারি আশিয়ান সিটির একটি জায়গায় আমার ছেলের লাশ পড়ে আছে। ছেলের বউ ও তিন নাতি-নাতনি আছে আমার। তারা ছোট ছোট, তাদের নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব। ছেলেই আমার সংসার চালাত।

নিহত জিহাদের বাবা হেলাল উদ্দিন বলেন, ২৫ ডিসেম্বর বিকালে গাড়ি নিয়ে বের হয় তার ছেলে। এরপর আর ফিরে আসেনি। চার দিন পর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আমরা গরিব মানুষ। আমার একমাত্র ছেলেটাকে ওরা বাঁচতে দিল না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর