বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চার লেনের সড়কে দুই লেনের ফ্লাইওভার!

ত্রুটি সারতে ১১ কোটি টাকা ব্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

চার লেনের সড়কে দুই লেনের ফ্লাইওভার!

রাজশাহীতে চার লেনের সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে দুই লেনের ফ্লাইওভার। এখন অতিরিক্ত টাকা খরচ করে পাশ দিয়ে আরেকটি ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহী মহানগরীর আলিফ লাম-মিম ভাটা থেকে বিহাস পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার চার লেনের সড়ক নির্মাণ করে সিটি করপোরেশন। সড়কটিতে লাগানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাতি। এ সড়কটিতে রাজশাহীর প্রথম ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু চার লেনের সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে দুই লেনের ফ্লাইওভার। এখন পাশ দিয়ে আরেকটি দুই লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলছে। এ ত্রুটি সারতে সিটি করপোরেশনকে ব্যয় করতে হচ্ছে ১১ কোটি টাকার বেশি। প্রথম ফ্লাইওভারের পাশেই নির্মিত হচ্ছে আরেকটি ফ্লাইওভার। ফলে প্রথম ফ্লাইওভারের চেয়ে দ্বিতীয় ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য একসঙ্গে টাকা বরাদ্দ দেয়নি। তাই এক কাজ দুবার করতে হচ্ছে। নির্মাণাধীন বর্তমান ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হলে দুই লেনজনিত ‘ত্রুটি’ আর থাকবে না। দ্বিতীয় ফ্লাইওভারটি নির্মাণের সময় নির্ধারিত ছিল গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে কাজ শেষ করতে আরও কয়েক মাস লাগবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম দফায় সড়কটির একাংশে ২০২ দশমিক ৫০ মিটার ফ্লাইওভার এবং ১২০ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় ২৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩২ টাকা। বর্তমানে প্রথম ফ্লাইওভারের পশ্চিম পাশে ১৯২ দশমিক ৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে আরেকটি ফ্লাইওভার এবং ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার ১২০ টাকা। আগের দুই লেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভার নির্মাণের চেয়ে দ্বিতীয় দুই লেনের ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার ৫৮৮ টাকা। একসঙ্গে চার লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ হলে নির্মাণ ব্যয় তুলনামূলক অনেক কম হতো বলে স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প এলাকায় দেখা গেছে, প্রথম ফ্লাইওভারের পশ্চিম পাশের দ্বিতীয় ফ্লাইওভার নির্মাণকাজও প্রায় শেষের দিকে। ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মাহামুদুল হাসান জানান, চার লেনের সড়কে আগে দুই লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। ফলে সড়কটিতে গাড়ির সংখ্যা বাড়লে দুই পাশের আট লেনের গাড়ি এসে ফ্লাইওভারের দুই পাশে যানজট লেগে যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য দ্বিতীয় ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে একসঙ্গে চার লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ করলে ব্যয় অবশ্যই কম হতো।

আগের প্রকল্পটির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন রাসিকের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী ও বর্তমান প্রকৌশল উপদেষ্টা আশরাফুল হক। তিনি জানান, সড়কটি নির্মাণের জন্য যখন প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়, তখন ফ্লাইওভার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। রেললাইনের জন্য শুধু একটা লেভেল ক্রসিং গেট নির্মাণের কথা ভাবা হয়েছিল। সেভাবেই প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছিল। পরে লেভেল ক্রসিং গেটের পরিবর্তে নিচে রেললাইন অক্ষত রেখে ওপরে ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। কিন্তু তখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চার লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণের বিশাল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দেয়নি। মন্ত্রণালয় তখন শুধু দুই লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। তাই তখন দুই লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। তবে তারা পরিকল্পনায় রেখেছিলেন, ভবিষ্যতে পশ্চিম পাশে আরেকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করে ফ্লাইওভারটি চার লেনের নির্মাণ ‘ত্রুটি’র সমাধান করার। এখন সেটাই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার জানান, পাঁচ বছর আগের বাজার দর এবং বর্তমান বাজার দর এক নেই। সবকিছুরই দাম বেড়েছে। তাই প্রকল্পটির ব্যয়ও বেড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর