শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বরিশাল খাদ্য বিভাগে ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার পেঅর্ডার জালিয়াতি

♦ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা ♦ তিন মিল কালো তালিকাভুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশাল জেলা খাদ্য বিভাগে খাদ্যসামগ্রীতে পুষ্টিগুণ বাড়ানোর কাজে জামানত হিসেবে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের দেওয়া ২ কোটি ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৪ টাকার ১১টি পে-অর্ডার ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। এক ব্যাংকারের সহযোগিতায় এই পে-অর্ডার জালিয়াতি করেন তিনি। ১১টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে সরকারকে জামানত বাবদ ২ কোটি ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৪ টাকা দেওয়া হলেও সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে মাত্র ৭ হাজার ২০০ টাকা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অভিযুক্ত মিল মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করে খাদ্য বিভাগ। এ ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। মামলায় অভিযুক্ত দুজন হলেন গৌরনদীর এলাহী এগ্রো লিমিটেডের (পুষ্টি মিশ্রণ মিল) স্বত্বাধিকারী মো. ফরহাদ হোসেন এবং অগ্রণী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপক মো. আলী রেজা। মিলের স্বত্বাধিকারী হিসেবে কাগজপত্রে ফরহাদ হোসেন লেখা থাকলেও তার প্রকৃত নাম নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সি। তিনি গৌরনদী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গত রবিবার মধ্য রাতে জেলা খাদ্য বিভাগের পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণার মাধ্যমে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৪ টাকার ১১টি পে-অর্ডার জালিয়াতির অভিযোগ করেন আসামিদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে বলা হয়- এলাহী এগ্রো লিমিটেড খাদ্য বিভাগের খাদ্যে পুষ্টিগুণ বাড়ানোর তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এই কাজে ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত মোট ১১টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৪ টাকার জামানত দেয় এলাহী এগ্রো লিমিটেড। যা যাচাইয়ে ভুয়া প্রমাণিত হয়। খাদ্য বিভাগের হিসাবে জমা হওয়া ২ কোটি ৬৮ লাখ ২৯ হাজার টাকার পে-অর্ডারের প্রকৃত মূল্য মাত্র ৭ হাজার ২০০ টাকা। ১০০ টাকার একটি পে-অর্ডার জালিয়াতি করে ১ কোটি ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫০৪ টাকা দেখানো হয়েছে। ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকার একটি পে-অর্ডার যাচাই করে পাওয়া গেছে ২০০ টাকা। অন্য ৯টি পে-অর্ডারও অনুরূপ জালিয়াতি করে খাদ্য বিভাগে জমা দেয় এলাহী এগ্রো। এ ছাড়াও ফরহাদ হোসেনের আরও দুটি প্রতিষ্ঠান খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত। বিষয়টি জানাজানি হলে গত রবিবার মধ্য রাতে অভিযুক্ত ফরহাদ হোসেন এবং অগ্রণী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপক মো. আলী রেজাকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করে খাদ্য বিভাগ। একই সঙ্গে ফরহাদ হোসেনের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করে তার মালিকানাধীন তিনটি মিল কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য অফিসের পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন।

২০১৮ সাল থেকে জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও ৫ বছর পর বিষয়টি খাদ্য বিভাগের নজরে পড়ার বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম। এর সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি মিল মালিক ও গৌরনদী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সি। পে-অর্ডার জালিয়াতির ঘটনা সঠিক নয় বলে তার দাবি।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর