শিরোনাম
সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিন্ডিকেটে আস্থা হারাচ্ছে খুমেক হাসপাতাল

নেপথ্যে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও টেন্ডারবাজি

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

সিন্ডিকেটে আস্থা হারাচ্ছে খুমেক হাসপাতাল

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাথলজি ব্যবসা, দালাল চক্র, রোগীর পথ্য (খাবার) ওষুধ সরবরাহ, আউটসোর্সিং নিয়োগসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। হাসপাতালে দায়িত্বরত অনেক চিকিৎসক-কর্মকর্তারাও জড়িয়ে পড়েছেন কমিশন বাণিজ্যে। এতে চিকিৎসাসেবায় আস্থা হারাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ভরসাস্থল হাসপাতালটি।   জানা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক দুর্বলতায় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে পড়েছেন রোগীরা। ২৪ জানুয়ারি বহির্বিভাগের গেটে অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত ভাড়া দাবিকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনদের মারপিট ও নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও শিশুটিকে উদ্ধার করা যায়নি। একইভাবে ১১ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর বাড়িতে নেওয়ার পথে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা তৈরি হলে রোগীর স্বজনদের আটকে রাখার ঘটনা ঘটে। তিন দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর ১১ ফেব্রুয়ারি শিশুটিকে সুস্থ মনে করে চিকিৎসক ছাড়পত্র দেন। কিন্তু বাড়িতে নেওয়ার পথেই শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় চিকিৎসকের অবহেলাকে দায়ী করে শিশুটির পরিবার। জানা যায়, সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও কমিশনের বিনিময়ে রোগীদের ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়। অধিক টাকার বিনিময়ে বাইরের ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীদের। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ জানিয়েছে, রি-এজেন্ট সংকটের কারণে দু-একটি পরীক্ষা ছাড়া সব মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ‘দ্রুত ও ভালোমানের পরীক্ষার’ প্রলোভনে সাধারণ রোগীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।

এদিকে সরেজমিন হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে দালাল চক্র, বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়। কারণ খুঁজলে ‘টেন্ডারবাজি ও আধিপত্য বিস্তারে বিভিন্ন সিন্ডিকেট মরিয়া- এমন তথ্য পাওয়া যায়। হাসপাতালে বিভিন্ন ঠিকাদার, আউটসোর্সিং কর্মচারী ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট বছরের পর বছর ধরে হাসপাতালে আধিপত্য বিস্তার করে চলছে। জানা যায়, হাসপাতালের জনবল সংকটের কারণে কয়েকটি ধাপে ঠিকাদারের মাধ্যমে আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি আউটসোর্সিংয়ে ১০০ জনবল সরবরাহ কাজে দরপত্র নিয়ে স্থানীয় দুজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সরকারি দলের নেতা ও ঠিকাদারদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এতে পুরো হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, আউটসোর্সিং সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মকর্তারাও জড়িত। হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান জানান, হাসপাতালের অভ্যন্তরে দালাল তৎপরতা বন্ধে অভিযান চালানো হবে। এ ছাড়া হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর