১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর হাতে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে নতুন অবয়ব দেওয়া হয়েছে। সংস্কার ও উন্নয়নের মাধ্যমে শহীদ মিনারের বিবর্ণ চেহারা পাল্টে দিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহীদ মিনার সংস্কার কাজের উদ্বোধন করবেন সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। ঐতিহাসিক শহীদ মিনার সংস্কার কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি বরিশালের দক্ষিণ সদর রোডের পাশে পরিত্যক্ত জমিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ হাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উদ্বোধনী ফলকে জাতির জনকের একটি বাণী থাকলেও সেটি স্থাপন করা হয় মিনারের পেছনে লোকচক্ষুর আড়ালে। প্রতি বছর ভাষার মাসে সেখানে নানা আনুষ্ঠানিকতা হলেও শহীদ মিনারটি ছিল অবহেলিত। ভাষা শহীদের এই স্মৃতিস্তম্ভের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়নি কোনো কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সিটি মেয়রের চোখে পড়ে জাতির জনকের সেই উদ্বোধনী বাণী। যেটি স্থাপন করা হয়েছিল শহীদ বেদির পেছনে ছোট একটি ফলকে। যার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির অমূল্য বাণী লোকচক্ষুর আড়ালে থাকায় বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য মেয়র সাদিক। সিটি করপোরেশন থেকে শহীদ মিনার সংস্কার, চত্বর উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেন তিনি। ইতোমধ্যে সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধন কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন ধোয়ামোছা চলছে। বিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বাশার জানান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কার, চত্বর উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বর্ধন কাজের আওতায় মূল বেদিতে টেন হোল ব্রিকস এবং চত্বরে আরসিসি ঢালাইয়ের ওপর টেন হোল ব্রিকস দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে। বেদিতে প্রবেশের জন্য আরসিসি রাস্তা, বেদির পেছনে গ্রিন রুম, পুরুষ ও নারীদের পৃথক ওয়াশরুম, ঘোষণা মঞ্চ, গ্রিলসহ সীমানাপ্রাচীর, প্রবেশ ও প্রস্থানের দুটি গেট, সৌন্দর্য বর্ধনের বৈদ্যুতিক বাতি এবং আকর্ষণীয় নানা গাছসহ ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। বেদির পেছনে সবুজের ওপর রক্তিম সূর্যের প্রতিচ্ছবি উজ্জ্বল করা হয়েছে। রয়েছে কার পার্কিং ব্যবস্থাও।
এদিকে শহীদ মিনারের পাশে সম্প্রতি একটি ক্লাব উচ্ছেদের পর ফাঁকা জায়গায় শিশুদের জন্য একটি আধুনিক পার্ক নির্মাণ করছে বিসিসি। পাশে বিশাল বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম এবং অডিটোরিয়ামের দক্ষিণ দিকের বিশাল দেয়ালজুড়ে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিশেষ মুহূর্তের ছবির ম্যুরাল রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর এই ম্যুরালটি দেশের সর্ববৃহৎ বলে জানিয়েছেন শহীদ মিনার সংস্কার কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা বিসিসির ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইয়েদ আহমেদ মান্না।
শহীদ মিনার সংস্কারের বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা এবং সুধীজনদের নিয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে মিনার চত্বরে মতবিনিময় করেন মেয়র সাদিক। এ সময় মেয়র বলেন, বরিশাল শহীদ মিনার বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন- এমন খবর নতুন প্রজন্ম জানে না। ছোট একটি ফলক স্থাপন করা হয়েছিল বেদির পেছনে। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া শহীদ মিনার এতদিন ছিল অবহেলিত। বিষয়টি জেনে তিনি শহীদ মিনার সংস্কারের উদ্যোগ নেন। নতুন প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধুর সেই উদ্বোধনী ফলক এবং বাণী বড় প্লেটে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।