সিলেট জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে চলছে তোলপাড়। দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে মারাত্মক অসন্তোষ। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ক্ষোভ ঝেড়েছেন দলের কয়েকজন নেতা। কমিটির প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে শোকজ করা হয়েছে। অভিযোগ ওঠেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দের লোকজনদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছেন। জেলা শাখার দীর্ঘদিনের পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের স্থান দেওয়া হয়েছে কমিটিতে। চলমান আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের নির্বাচনী এলাকার লোকজনদের দিয়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। বিস্ফোরণোন্মুখ এই অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাতিল কিংবা পুনর্গঠনের দাবি জানাচ্ছেন বিদ্রোহীরা। দলীয় সূত্র জানায়, ১৯ মার্চ আবদুল কাইয়ূম চৌধুরীকে সভাপতি ও এমরান আহমদ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে সিলেট জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটি প্রকাশের পরই সিলেট জেলা বিএনপিতে বিদ্রোহ শুরু হয়। কমিটিতে বাদ পড়াদের পাশাপাশি স্থান পাওয়া অনেক নেতাও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অভিযোগ ওঠে, কমিটিতে সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকা (সিলেট-৩ আসন) দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ এবং সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী (সিলেট-৬ আসনভুক্ত) গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের নেতাদের বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ১৫১ জনের কমিটির মধ্যে এ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্বাচনী আসনের ৮৭ জন নেতা স্থান পেয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা ও পৌর শাখার ১৮ জন আহ্বায়কের মধ্যে কমিটিতে স্থান পেয়েছেন মাত্র দুজন। বাকি ১৬ জনকে রাখা হয়নি কমিটিতে। এমনকি যেসব উপজেলা পরিষদ ও ইউপি চেয়ারম্যান দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনই করেননি তাদেরও স্থান দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় ২১ মার্চ দলীয় এক সভায় অংশ নিতে সিলেট আসেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ওই দিন সিলেট নগরীর দরগাহ গেটের একটি হোটেলে আমীর খসরু মাহমুদের সামনে জেলা বিএনপির সভাপতির ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন কয়েকজন নেতা। এ ব্যাপারে আমীর খসরুসহ উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপও কামনা করেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। কিন্তু বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে গত মঙ্গলবার কেন্দ্র থেকে শোকজ করা হয় নবগঠিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলুকে। এই শোকজ যেন ‘উত্তপ্ত কড়াইয়ে ঘি ঢালা’র মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে এখন নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। তারা কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের দিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান পাপলু বলেন, ‘কমিটিতে না স্থান পেয়েছেন ত্যাগীরা, না হয়েছে আন্দোলনমুখী।
পুরনো বিএনপিকে আড়ালে ঠেলে দিয়ে নতুন এক বিএনপিকে তুলে ধরেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এটা পরিকল্পিত না অনিচ্ছাকৃত তা জানি না। তবে এই কমিটি দেখে শুধু বঞ্চিতরা নয়, পদপ্রাপ্ত অর্ধেক নেতাই হতাশ।’ নবগঠিত কমিটির সদস্য (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) আবদুল আহাদ খান জামাল বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে নিজেদের ইচ্ছামতো কমিটি করেছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। দলীয় স্বার্থ চিন্তা না করে দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন।’ নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর সিলেট জেলা বিএনপিতে মারাত্মক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। যেখানে আন্দোলনমুখী কমিটি হওয়ার কথা ছিল, সেখানে পুরো কমিটি হয়ে গেছে দুটি আসনভিত্তিক।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ত্যাগীদের দিয়েই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে উপজেলা পর্যায়ের নেতাদেরই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তবে শহরের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় আন্দোলনের কথা বিবেচনা করে সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে হয়তো কেউ কাক্সিক্ষত পদ পাননি, তাই বিরোধিতা করছেন।