শিরোনাম
সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত খুলনা রংপুর

২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, ইফতার সাহরির সময়ও থাকছে না বিদ্যুৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা ও রংপুর

লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত খুলনা রংপুর

খুলনায় তাপ প্রবাহের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। অস্বস্তিকর গরমের মধ্যে চলছে দফায় দফায় লোডশেডিং। দিনে-রাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থাকছে বিদ্যুৎবিহীন। লোডশেডিংয়ে অফিস-আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনের কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে। গরমে ঘেমে ভিজে নাকাল হচ্ছে মানুষ। দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে খুলনার জনজীবন। খুলনার আবহাওয়া অফিসের প্রধান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, গতকাল খুলনায় তাপমাত্রা ছিল ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা বিগত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে শুক্রবার খুলনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। এদিকে গরমের তীব্রতায় রাস্তায় বের হওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। কাঠফাটা রোদে যেন আগুনের উত্তাপ চারপাশে। বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে চরম ভোগান্তি নেমে এসেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হচ্ছেন না। অবশ্য ঘরেও স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। ভ্যাপসা গরমে সারা রাত কেউ ঘুমাতে পারে না। ফ্যান চালিয়েও ঘরে থাকা যায় না। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শিশুসহ সব বয়সী মানুষ। হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া, পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। নগরীর পল্লীমঙ্গল ফিডারের বাসিন্দা ডা. ফরিদউদ্দিন আহমেদ জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। এক ঘণ্টা পর আসে। রাত ১০টার দিকে আবার লোডশেডিং হয়। এরপর রাত সাড়ে ১২টা ও ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দফায় দফায় লোডশেডিং হয়। সকাল ৯টায় আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। তিনি বলেন, সারা দিনের তপ্ত আবহাওয়ায় ভোরের দিকেও ঘরের ভিতরে গরমে নাভিশ্বাস ওঠে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে যেন দম বন্ধ হয়ে আসে।

ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর সহকারী প্রকৌশলী তারেক আহমেদ জানান, গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। আবার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। খুলনার পাওয়ার হাউস মোড়, পিকচার প্যালেস, টুটপাড়া, রূপসা, হাজী মুহসীন রোডসহ ডিভিশন-১ এর বিদ্যুতের চাহিদা ৩৬ মেগাওয়াট। সেখানে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে ১৩ মেগাওয়াট। ফলে অর্ধেকের বেশি গ্রাহককে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গরমে বিদ্যুতের লোড বেড়ে যাওয়ায় ট্রান্সফরমারসহ বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এসব মেরামতে সময় লাগছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় কিছু লোডশেডিং হচ্ছে।

এদিকে কয়েকদিন থেকে রংপুরসহ সারা দেশেই চলছে দাবদাহ। এর মধ্যে চলছে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। এ কারণে রংপুরের জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বারবার লোডশেডিং দেওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই স্থবরিতা বিরাজ করছে। ইফতার, তারাবি, সাহরি কোনো সময়ই নিয়ম মেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না। রংপুর বিভাগের আট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট। এর বিপরিতে বরাদ্দ পাওয়া পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট। গতকাল দুপুরে ঘটতি ছিল ১৫০ মেগাওয়াটের বেশি। ফলে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখ লাখ গ্রাহক। প্রচ  গরমে সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছে শিশু ও বয়স্করা। নর্দান ইলেকট্রি সাপ্লাই (নেসকো) বলছে, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে। তবে সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা চলছে। 

রংপুর নেসকো সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৯০০ মেগাওয়ার্ট। চাহিদার বিপরিতে বরাদ্দ ১৫০ মেগাওয়াট কম। রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় চাহিদার চেয়ে ঘাটতি রয়েছে। ফলে অনেক স্থানে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পর্যায়ক্রমে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোথাও আধা ঘণ্টা আবার কোথাও এক ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। ফলে শিল্প-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এমনিতে বাজরগুলোয় প্রচ  ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।  এর মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ঈদবাজারে আসা ক্রেতাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

লোডশেডিং প্রসঙ্গে মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাইল ইসলাম মিলন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আধাঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কেনাবেচা বাড়বে, এ সময় বিদ্যুতের এমন লোডশেডিং চরম বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। প্রচ  গরম আর লোডশেডিংয়ের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। বিদ্যুৎ ঘন ঘন যাওয়া-আসা করায় রোগী এবং তাদের স্বজনরা চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন।

কারখানার মলিকরা বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে তারা লোকসানের আশঙ্কা করছেন। তারা এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

নেসকোর রংপুর বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। অবস্থা উত্তরণের চেষ্টা চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর