সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ওষুধ ও প্রসাধনীর জন্য পৃথক আইন চান ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওষুধ ও প্রসাধনীকে একই আইনের আওতায় না এনে বরং এই দুই শিল্পকে পৃথক আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন প্রসাধনী ব্যবসায়ীরা। গতকাল এফবিসিসিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত ঔষধ ও কসমেটিক্স আইন-২০২৩ : বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রসাধনী ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান। ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রস্তাবিত ঔষধ ও কসমেটিক্স আইন-২০২৩ এর ৩১-৩৫ ধারা অনুযায়ী কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি বা রপ্তানির জন্য এবং এ কাজে নিয়োজিত কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকান মালিককে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে নিবন্ধন ও লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ একই বিষয়গুলো অনুসরণ করে বিএসটিআই আইন-২০১৮ এর অধীনে কসমেটিক্সের প্রয়োজনীয় সব লাইসেন্স প্রদান করে আসছে বিএসটিআই। একই  বিষয়ে নতুন একটি রেগুলেটর শুধু আরেকটি স্তর তৈরি করবে এবং ব্যবসা করার খরচ ও জটিলতা বাড়াবে। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ওষুধ ও কসমেটিক দুটো পণ্যই সাধারণ ভোক্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তবে  এ দুটি পণ্যের চাহিদা এবং ব্যবহারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। দুটো শিল্পের জন্য যুগপোযোগী আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। তবে উৎপাদন পর্যায় থেকে আমদানি পর্যন্ত এ দুটি পণ্যের ব্যবহারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ায় একই আইনের আওতায় এনে ঔষধ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রসাধনী সামগ্রীর কার্যক্রম পরিচালিত হলে প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন।’ মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কসমেটিক্স এবং ওষুধের জন্য একই আইন ও এর প্রয়োগ ঔষধ প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাব্য সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। কারণ আইন অবশ্যই ব্যবসাবান্ধব হতে হবে, অন্যথায় এ শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে, যা কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি।

 সাধারণত যে কোনো আইন প্রণয়ন করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও উল্লিখিত আইনটি তৈরির ক্ষেত্রে কসমেটিক্স ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করায় আইনটি বাস্তবায়নের আগে এর প্রায়োগিক সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করে এফবিসিসিআই এ সেমিনার আয়োজন করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয় এমন কোনো আইন করা হবে না। যখনেই কোনো আইন করা হয়, তা মানুষের মঙ্গলের জন্যই করা হয়। বিশেষ অতিথি বিডার চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ড্রাগ আইনটি বেশ ভালো। পূর্বে অ্যান্টিবায়োটিক সবাই যে যার মতো ব্যবহার করতে পারলেও নতুন আইনের মাধ্যমে তা পারবে না। এ সময় ক্ষুদ্রশিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিএসটিআইর মহাপরিচালক আবদুস সাত্তার বলেন, দেশ, দেশের প্রতিষ্ঠান ও জনগণকে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার জন্য সবরকম সহযোগিতা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হতে পারবে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিএসটিআই থেকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। 

প্যানেল ও উন্মুক্ত আলোচনায় যুক্ত হয়ে বক্তারা বলেন, কসমেটিক্স এবং ওষুধ প্রকৃতিগতভাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের পণ্য। যেহেতু কসমেটিকস হলো ভোক্তার কাক্সিক্ষত সুবিধার ওপর ভিত্তি করে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার এবং সৌন্দর্যায়নের জন্য ভোক্তাবান্ধব পণ্য, সেহেতু এগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাধারণত ব্যবহারের জন্য নিরাপদ। অন্যদিকে ওষুধ রোগ/ অসুস্থতা, নিরাময় এবং চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত এবং ওষুধের ব্যবহারের সঙ্গে উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকি জড়িত, তাই ওষুধের ক্ষেত্রে পৃথক নিয়ন্ত্রণমূলক বিধানাবলি প্রযোজ্য হয়ে থাকে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে এটি ব্যবহৃত হয়। এ কারণেই, এ দুই ধরনের পণ্য আলাদা আলাদা আইন ও বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার যৌক্তিকতা ও আবশ্যকতা রয়েছে। এফবিসিসিআইর সহসভাপতি এম এ মোমেন বলেন, ‘এ দুটি পণ্যের উৎপাদন কার্যক্রম চাহিদা এবং ব্যবহারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিধায় এর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পৃথক প্রশাসন থাকা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. নুরনবী। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার, বিএসটিআইর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন সরকার, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ডিএমডি ও সিইও মো. হালিমুজ্জামান, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান, মিল্লাত কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের এমডি মেহফুজ জামান। এ সময় এফবিসিসিআইর সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, হাবিব উল্লাহ ডন, ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, এফবিসিসিআই পরিচালক, ব্যবসায়ী নেতাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর