বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

আসছে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা

♦ দুর্যোগকালে দুর্গম অঞ্চলে নিশ্চিত হবে স্বেচ্ছাসেবা ♦ ৫ ডিসেম্বর পালন করা হবে স্বেচ্ছাসেবা দিবস

আকতারুজ্জামান

জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা করছে সরকার। শিগগিরই এ নীতিমালা জারি করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। নীতিমালা হলে স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম শৃঙ্খলায় ফিরবে, দুর্গম অঞ্চলেও নিশ্চিত হবে স্বেচ্ছাসেবা। শুধু দেশে নয়, জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকদের দেশের বাইরেও পাঠানো হবে। আট ক্যাটাগরিতে নির্ধারণ করা হবে স্বেচ্ছাসেবক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা যুক্ত হবেন স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমে। চলতি বছর থেকেই ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবা দিবস পালন করবে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবাকে জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করাই এ নীতিমালার মূল লক্ষ্য। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি এবং এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে স্বেচ্ছাসেবা। জাতীয় উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবকদের অবদানের বিষয়ে তথ্যভাণ্ডার তৈরি, তাদের সংগঠিত করা, কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই করা হচ্ছে এ নীতিমালা।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই নীতিমালার আওতায় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থার মাধ্যমে সমন্বিত, লক্ষ্যনির্ভর ও সুনির্দিষ্টভাবে স্বেচ্ছাসেবা প্রদান সম্ভব হবে। স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য থাকবে ভাতার ব্যবস্থাও। যৌন নিপীড়ন, হয়রানি ও অপব্যবহার রোধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবার বিষয়টি নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করা হবে, যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

নীতিমালার খসড়া থেকে জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত সমস্যায় স্থানীয় জনগণকে জরুরি সেবা প্রদানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে স্বেচ্ছাসেবকরা সেখানে কাজ করবেন। দুর্যোগের সময় উদ্ধারকাজ সম্পাদন ও উদ্ধার সরঞ্জামাদি ব্যবহারের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। আট ক্যাটাগরিতে স্বেচ্ছাসেবক নির্ধারণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে- সাধারণ স্বেচ্ছাসেবক, প্রবীণ স্বেচ্ছাসেবক, অনলাইন স্বেচ্ছাসেবক, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক, অনিবাসী স্বেচ্ছাসেবক, কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক ও পেশাদার স্বেচ্ছাসেবক।

পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকদের কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট দফতর বা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের স্বীকৃতি প্রদান করতে বলা হয়েছে নীতিমালায়। দেশব্যাপী স্বেচ্ছাসেবার প্রসার ও স্বেচ্ছাসেবকদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য প্রতিবছর ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবা দিবস পালন করা হবে। স্বেচ্ছাসেবার সঙ্গে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণের লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি কার্যকর তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি থাকবে। এ পদ্ধতিতে থাকবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ স্বেচ্ছাসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের প্রবেশাধিকার। সংযুক্ত করা হবে ই-গভর্ন্যান্স, এটুআই, পৌর ডিজিটাল সেন্টারকেও।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার (জাতিসংঘ স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা- ইউএনভি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি- ইউএনডিপি, আন্তর্জাতিক রেডক্রিসেন্ট ফেডারেশন- আইএফআরসি ও ভলান্টিয়ার সার্ভিস ওভারসিজ- ভিএসও) সঙ্গে সহযোগিতা সম্প্রসারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, জরুরি প্রয়োজনে ও দুর্যোগের মুহূর্তে কাজ করতে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা কাজ করবেন। যারা ভালো কাজ করবেন তাদের পুরস্কার ও সম্মাননা দেওয়া হবে। শিগগিরই মন্ত্রণালয় এই নীতিমালা জারি করবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আগে থেকেই স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু নীতিমালা হলে সব কাজ আরও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর