বুধবার, ১০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

পরিবার পরিকল্পনা সেবা ব্যাহত খুলনায়

জেলা কার্যালয়ে অস্থিরতা এক আদেশে ১৩ জনকে বদলি, মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনায় হঠাৎ করেই পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব, কর্মস্থলে কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি, হয়রানিমূলক বদলিতে মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল একই সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, দাই নার্স, অফিস সহায়কসহ ১৩ জনকে বদলি করা হয়। এর মধ্যে দীঘলিয়া যোগীপোল ইউনিয়ন থেকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও আয়া পদে দুজনকে বদলি করায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। দীঘলিয়া উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডা. সুলতানা জিনাৎ ফাতেমা জানান, জনবহুল ও সক্ষম দম্পতির (৫০৩০টি) দিক থেকে ইউনিয়নটির অবস্থান খুলনায় চতুর্থ। পাটকলসহ কলকারখানা থাকায় এখানে শ্রমজীবী নিম্নআয়ের মানুষ বসবাস করে। ফলে জরুরিভিত্তিতে ইউনিয়ন ক্লিনিকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও আয়া পদে পদায়নের জন্য তিনি উপপরিচালককে দাফতরিক চিঠি দিয়েছেন। জেলা কার্যালয়ে উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শামসুদ্দীন মোল্লা একই সঙ্গে ১৩ জনকে বদলির ওই আদেশ দেন। আদেশে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত না হলে অপরাহ্ণ থেকে বদলিকৃতরা তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হিসেবে গণ্য হবেন বলে জানান। এদিকে অভিযোগ রয়েছে- ১০ জানুয়ারি মো. শামসুদ্দীন মোল্লা খুলনায় যোগদানের পর থেকে কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানি করে সুবিধা গ্রহণ করছেন। গত দুই মাসে তিনি ১৯ দিন নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এর বাইরেও অনুমতি ছাড়াই তিনি দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। পরিবার পরিকল্পনা খুলনা বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. হাবিবুল হক খান গত ২৬ এপ্রিল জেলা কার্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে শামসুদ্দীন মোল্লাকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখেন। একই সঙ্গে ওই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাশেদুল বশির, অফিস তত্ত্বাবধায়ক মিজানুর রহমান, অফিস সহকারী মো. নুরুন্নবীও কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে বিভাগীয় পরিচালক হাবিবুল হক খান জানান, কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই জেলা উপপরিচালক কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। এর আগেও কয়েক দফা তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়। তিনি বলেন, উপপরিচালক শামসুদ্দীন মোল্লা গত ১০ জানুয়ারি থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের গেস্ট রুমে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এতে আর্থিক ক্ষতিসহ সরকারি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অফিসের মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে দিয়ে রান্নার কাজ করানোর ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সিনেমা দেখানো সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, অফিসের কর্মচারী ও মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের হয়রানির অভিযোগে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তারা স্বাভাবিক পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখতে তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

বদলি সংক্রান্ত আদেশে উপপরিচালক শামসুদ্দীন মোল্লা উল্লেখ করেন, বদলিকৃত ১৩ জনের মধ্যে তিনজনকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে বিভাগীয় কর্মসূচির স্বার্থে বদলি করা হয়েছে। এদিকে গতকাল সরেজমিনে জেলা কার্যালয়ে গেলে তাকে শামসুদ্দীন মোল্লা অনুপস্থিত দেখা যায়। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সহকারী পরিচালক রাশেদুল বশির জানান, তিনি মন্ত্রণালয়ের কাজে ঢাকায় গেছেন। বিষয়টি বিভাগীয় পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর