বুধবার, ১০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

যৌতুকের দাবিতে ১৫ দিন বেঁধে রেখে নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

যৌতুকের দাবিতে শাহনাজ (২৪) নামে এক গৃহবধূকে ১৫ দিন বেঁধে রেখে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। থানায় নালিশ করলেও পুলিশ থাকে নির্বিকার। তাই গৃহবধূ ও তার দিনমজুর পরিবার দিশাহারা। ঘটনাটি সদর উপজেলার হরিদেবপুর ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের। জানা গেছে, ছয় বছর আগে ফকিরপাড়ার মহির উদ্দিনের ছেলে ট্রলিচালক ফিজু মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের বড় মটুকপুর গ্রামের শাহজাদা মিয়ার মেয়ে শাহনাজের। তাদের ঘরে পাঁচ বছরের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। বিয়ের সময় শাহনাজের পরিবার জামাইকে যৌতুক হিসেবে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেয়। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্য শাহনাজের ওপর স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করে আসছিলেন। নির্যাতন সইতে না পেরে শাহনাজ বাবার বাড়ি চলে গেলে সালিশি বৈঠকে আপস করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন শাহনাজকে বাড়ি নিয়ে আসেন। সম্প্রতি বাড়ি নির্মাণের জন্য বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে ফিজু মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা শাহনাজকে চাপ দেন। শাহনাজ সম্মত না হওয়ায় স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের সদস্যরা ১৫ দিন শাহনাজকে ঘরে বেঁধে রেখে মারধর করেন। তারা তার মাথায় মেডিসিন ঢেলে দেন। এতে মাথার সব চুল পড়ে গিয়ে ন্যাড়া হয়ে যান শাহনাজ। এরই মধ্যে শাহনাজের পরিবার খবর পেয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। ৭ মে মমিনপুর ইউপি মেম্বার ছাইদুল হককে সঙ্গে নিয়ে শাহনাজ, তার বাবা, মা উপস্থিত হয়ে স্বামী ফিজু মিয়া, শ্বশুর-শাশুড়িসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। খবর পেয়ে থানা থেকে ফেরার পথে ইউপি মেম্বারের মোটরসাইকেল আটকিয়ে শাহনাজের বাবাকে ফিজু মিয়া মারধর করেন এবং ইউপি মেম্বারকে হুমকি দেন। এ ঘটনায় ওই ইউপি মেম্বার তাৎক্ষণিক থানায় গিয়ে ফিজু মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। শাহনাজ বেগম বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা যৌতুকের জন্য আমায় নির্যাতন করে আসছিল। এর পরও কৃষিশ্রমিক বাবা বিয়ের সময় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা জামাইকে দিয়েছিলেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন কিছুদিন আগে যৌতুকের টাকা আনতে বললে আমি রাজি হইনি। তাই তারা আমাকে ১৫ দিন ঘরে বেঁধে রেখে মারধর করে। আমার চুলে মেডিসিন দিয়ে ন্যাড়া করে দেয়। আমি থানায় অভিযোগ করতে গেলে স্বামী ফিজু মিয়া আমার বাবাকে মারধর করে। আমি ফিজু মিয়ার সংসার করব না, আমি তার উপযুক্ত বিচার চাই।’ হরিদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’

রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসি সুশান্ত কুমার বলেন, ‘শাহনাজ বেগম তার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তার মাথা কীভাবে ন্যাড়া করা হয়েছে তা জানতে মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর