সুরমা নদীকে বলা হয় সিলেট নগরীর ‘লাইফ লাইন’। সিলেট নগরীকে দুই ভাগ করে বহমান সুরমা। আর বিভক্ত নগরীকে এক করেছে সুরমার ওপরের লোহার কাঠামোর লাল রঙের সেতু। কিন ব্রিজ নামেই যে সেতুটি বহন করছে সিলেটের নানা ইতিহাস-ঐতিহ্য। ৯ দশক ধরে সুরমার দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত এই সেতুটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানে স্থানে উঠে গেছে পাটাতন। রেলিং ও পিলারে ধরেছে জং। এই অবস্থায় সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে রিকশা ছাড়া সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যের এই সেতুটি রক্ষায় অবশেষে শুরু হচ্ছে ২ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ। অর্থ বরাদ্দের প্রায় দুই বছর পর আগামী সপ্তাহেই এই সেতুটির সংস্কার কাজ শুরুর কথা রয়েছে। সংস্কার শেষ হলে সেতুটি দিয়ে আগের মতো যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সিলেট নগরীর ভিতর দিয় প্রবাহমান সুরমা নদীর দুই পাড়কে সংযুক্ত করতে ১৯৩৬ সালে নির্মাণ করা হয় লোহার কাঠামোর একটি সেতু। ব্রিটিশ আমলে দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি নির্মাণ করেছিল রেলওয়ে বিভাগ। সেতুটি নির্মাণে লেগেছিল প্রায় দুই বছর। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামানুসারে ওই সময় সেতুটির নামকরণ করা হয় ‘কিন ব্রিজ’। সুরমার ওপর নির্মিত প্রথম সেতুটি দিয়ে গত ৮৭ বছর ধরে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে আসছে। ১ হাজার ১৫০ ফুট দীর্ঘ ও ১৮ ফুট প্রশস্তের ওই সেতুটি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুটি সংস্কার করে। এরপর গত ৪৬ বছর সেতুটিতে আর সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন থাকায় বর্তমানে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সেতুটির বিভিন্ন স্থানে পাটাতন উঠে গেছে। লোহার রেলিং, পিলার ও লিন্টারেও জং ধরে ক্ষয়ে গেছে। সবমিলিয়ে সেতুটিকে ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ও সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে। রিকশা ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত প্রায় আট বছর ধরে ওই সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে রেলওয়ের সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) জিসান দত্ত গণমাধ্যমকে জানান, ‘ইতোমধ্যে কিন ব্রিজ সংস্কারের জন্য যাবতীয় মালামাল সিলেটে আসতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহেই কাজ শুরু হবে।
এক মাসের মধ্যেই সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ এই সেতুটি নির্মাণ করেছিল। তাদের অভিজ্ঞতা ভালো থাকায় সেতুটির সংস্কারের কাজ রেলওয়েকেই দেওয়া হয়েছে।’