বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রাথমিকে বায়োমেট্রিক মেশিনের নেই ব্যবহার

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

প্রাথমিকে বায়োমেট্রিক মেশিনের নেই ব্যবহার

চট্টগ্রামের বেশির ভাগই সরকারি স্কুলে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন নেই বললেই চলে। আর যেসব স্কুলে আছে তার সঠিক ব্যবহার হয় না। কিছু মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটি থাকলেও আবার অনেক স্কুলে ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করে রাখা হয়েছে। যার কারণে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্কুল ফাঁকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। তবে এর প্রবণতা বেশি শহরের স্কুলে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে কোচিং আর ব্যাচ বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকেন শহর এলাকার বেশিরভাগ সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা। চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুল পর্যায়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন বসানোটা অনেক আগের প্রকল্প, কিছু কিছু স্কুলে এ বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন বসিয়েছিল। আবার অনেক স্কুল করেনি, যারা করেনি তারা টাকা ফেরত দিয়েছে। কোন কোন স্কুল করেছে তা উপজেলা ও থানা শিক্ষা অফিসে আছে। চট্টগ্রামে কতটি স্কুলে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় করা হয়েছে তার কোনো তথ্যও জানা নেই এই কর্মকর্তার।

নগরের কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিনটি প্রধান শিক্ষককের রুমে পড়ে আছে। বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিনটি ক্রয় করার পর বছর দুয়েক সচল ছিল। এর মধ্যে করোনা মহামারির কারণে সরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময়ে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিনটি আর ব্যবহার হয়নি। এরপর স্কুল খোলার পর জেলা পর্যায় থেকে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ব্যবহার নিয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকার কারণে তা আর ব্যবহার করা হয়নি বলে জানান স্কুলের শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন থাকলে শিক্ষকরা স্কুল ফাঁকি দিতে পারত না। এখন তারা স্কুলের চেয়ে ব্যাচ ও কোচিং সেন্টারে মনোযোগ দিচ্ছেন বেশি। যখন খুশি স্কুল থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। তাই প্রাথমিক শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করার জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন প্রকল্প আবারও চালু করা প্রয়োজন। তাহলেই শিক্ষার মান যেমন বাড়বে, তেমনিভাবে শিক্ষকরাও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্কুলে থাকবেন। কয়েক জন শিক্ষক জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় করার নির্দেশনা আসে। এরপর তা জেলা পর্যায় থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে তৎকালীন সময়ে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি অনিয়ম করতে চেয়েছেন। নিজস্ব লোকের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের জন্য শিক্ষকদের চাপ দেন এবং তাও আবার বাজার থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা বাড়তি দামে। নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার শিক্ষকরা তার প্রতিবাদ করলে তিনি তা থেকে সরে আসেন। এসব বিষয় নিয়ে অভিযোগ ও তদন্তসহ নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে এ প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর থেকে এসব মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। নতুন করে কোনো নির্দেশনা না থাকার কারণে সেভাবে আর এ প্রকল্প নিয়ে কেউ আলোচনা করেনি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করতে বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ জুন এক চিঠিতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, স্কুলের সরকারি ফান্ড থেকে স্কুল পরিচালনা কমিটি মেশিন কিনবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর