শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

৩৮ বছরেও মেলেনি ম্যাজিস্ট্রেট

সমস্যায় জর্জরিত চট্টগ্রাম বিএসটিআই

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই কারখানা স্থাপন ও খাদ্যপণ্য তৈরি করে আসছে অসাধু বিভিন্ন ব্যবসায়ী চক্র। বিভিন্ন সময়ে নগরীর এসব কারখানায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হলেও তা থেকে মিলছে না কোনো সমাধান। কারণ অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস নানা সমস্যায় জর্জরিত। যাত্রার ৩৮ বছর পার হলেও এখনো নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না পেয়ে জেলা প্রশাসনের ধার করা ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে চালাতে হচ্ছে অভিযান। ফলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য তাদের দ্বারস্থ হতে হয় জেলা প্রশাসনের। এ ছাড়া লোকবল সংকটে আশানুরূপ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায়ও বেগ পেতে হচ্ছে কর্তব্যরতদের। ফলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে পণ্যের অনুমোদন না নিয়েই ব্যবসা করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ঠকছেন ভোক্তারা। মানহীন পণ্যে ঝুঁকিতে পড়ছে মানবস্বাস্থ্যও।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৮৫ সালে বিএসটিআই নামে চট্টগ্রাম অফিসের যাত্রা হয়। এ ৩৮ বছরে অনেকবার ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদার কথা ঢাকা অফিসকে জানানো হলেও কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। অন্য পাঁচটি বিভাগীয় অফিসের মতো করে চট্টগ্রামকে ভাবার কারণে চট্টগ্রাম চাহিদা দিলেও তা গুরুত্ব দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। ঢাকার পরই চট্টগ্রামের অবস্থান হলেও চট্টগ্রামকে গ্রামাঞ্চল ভাবা হচ্ছে। বিএসটিআইয়ে শুধু ম্যাজিস্ট্রেট সংকট নয়, যন্ত্রপাতির সংকটও প্রকট। এ ছাড়া অত্যাধুনিক ল্যাব না থাকায় আমদানিকৃত পণ্যের মান সনদ পেতে ব্যবসায়ীদের ছুটতে হয় ঢাকায়। বিশেষ করে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় চনাচুর, সরিষার তেল, ড্রিংকিং ওয়াটার, লোহার রড, সিমেন্ট, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, সফট ড্রিংকস, শিশুদের খাওয়ার গুঁড়া দুধ ঢাকায় পাঠাতে হয়। এ ছাড়া বিএসটিআইয়ের জন্য ১০ তলা একটি ভবন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর গত মে মাসে তা আবার চালু হয়েছে। ২০১৪ সালে এ ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পায় আলোচিত ব্যবসায়ী জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে মাঝপথে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সংকট আছে, তা ঢাকায় জানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত আশানুরূপ কোনো সংবাদ আমরা পাইনি। ইতোমধ্যে আমাদের যে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল তা মে’র শুরুতে চালু হয়েছে। আমরা আশা করি এ ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হলেই সমস্যা সমাধান হবে। আমাদের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, জায়গার অভাবে বসানো যাচ্ছে না।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালক (সিএম) মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা কোনো প্রতিষ্ঠানে গেলে সীমাহীন অনিয়ম পেলেও প্রতিষ্ঠান সিলগালা করতে পারি না। আমরা শুধু মামলা করতে পারি। সেই মামলা আদালতে শুনানি হতে সময় লাগে। আর এ সুযোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনিয়ম করে যাচ্ছে। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে আমরা বারবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়েছি কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো শোধরায় না।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বিএসটিআই চট্টগ্রাম অফিসে এখন যে যন্ত্রপাতি ও লোকবল রয়েছে তার মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার হয়। তাদের কার্যক্রম চোখেই তো পড়ে না। যখন জেলা প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় তখন বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন পণ্য ধরা পড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এতেই বোঝা যায় মাঠ পর্যায়ে তারা আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর