বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রস্তাবিত বাজেট স্মার্ট লুটপাটের : বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করে, এই বাজেট নজিরবিহীন লুটপাট, অলীক কল্পনার, অবাস্তবায়নযোগ্য ও গণবিরোধী। বিএনপি বলছে, স্মার্ট বাংলাদেশে এবার আওয়ামী লীগ সরকার স্মার্ট লুটপাটের বাজেট দিয়েছে। গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের এসব মতামত তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ‘নজিরবিহীন লুটপাট ও অলীক কল্পনার অবাস্তবায়নযোগ্য গণবিরোধী বাজেট’ শীর্ষক শিরোনামে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাজেটে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ক্ষমতার বলয়ের বাইরে সাধারণ মানুষের অনুকূলে এ বাজেট কোনো ভূমিকা রাখবে না। এ বাজেট গণবিরোধী। তিনি আরও বলেন, এটা কল্পনাবিলাসী বাস্তবায়ন-অযোগ্য ও উচ্চাভিলাষী বাজেট। এটা স্রেফ দুর্নীতিবাজ সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটের লক্ষ্যে প্রণীত ‘অর্থ লুটেরাদের বাজেট’।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, গত এক দশকে গোষ্ঠীস্বার্থে পলিসি ইস্যুজ, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, রাজস্ব সেক্টর বা আর্থিক খাতসহ অন্যান্য জরুরি খাতে কাঠামোগত বড় কোনো সংস্কার করা হয়নি। এই বাজেটেও এসব সংস্কারের কোনো ইঙ্গিত নেই।

তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে এবার তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) স্মার্ট লুটপাটের বাজেট দিয়েছে। তারা চুরিতে স্মার্ট। ভোট চুরি, ব্যাংক চুরি, অর্থ পাচার এসব কিছুতেই। স্মার্টলি লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি করার, ব্যাংক লুটপাট, সিন্ডিকেট পরিচালনা, জনগণের সম্পদ লুটের পাকা বন্দোবস্ত করা হয়েছে এ বাজেটে। এ বাজেট বাস্তবতাবিবর্জিত, প্রতারণামূলক, লোক দেখানো বাজেট, জনকল্যাণের নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার এক বার্ষিক ঘোষণাপত্র মাত্র। তিনি বলেন, বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে যাওয়া, বেপরোয়া অর্থ পাচার, জনগণের কাঁধে রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা একবারের জন্যও স্বীকার করা হয়নি। পরিত্রাণের উপায়ও বলা হয়নি। তেমনি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের ধারণাকে।

দেশের অর্থনীতি মহাবিপর্যয়ে রয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ডলারের সংকট প্রকট। পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে প্রায় সব ব্যাংক ফিরিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার দাবি, অর্থ পাচার অব্যাহতভাবে বাড়ছে। জিএফআই বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়। সিআইডি বলছে, শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে গড়ে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য মিলে প্রতি বছর কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে। গত ছয় বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। চীন ও রাশিয়া থেকে নেওয়া কঠিন শর্তের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ২০২৪ সাল থেকেই বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সে সময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের বোঝা ছিল ৩২৪ মার্কিন ডলার, টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৩২ হাজার ৭৪০ টাকা (প্রতি ডলার ১০১ টাকা দরে)। বর্তমানে আরও বেড়েছে। আইএমএফ চাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোতে ১০ শতাংশের নিচে ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ৫ শতাংশ এর নিচে থাকুক খেলাপি ঋণের পরিমাণ। কিন্তু বর্তমানে কৌশলে এক ব্যাংকের আদায়যোগ্য খেলাপি ঋণ আরেক ব্যাংকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

বিএনপি মনে করে, দেশের এই চরম অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে প্রয়োজন ছিল দল, মত ও ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে একটি সাহসী ও বাস্তবসম্মত বাজেট। কিন্তু মোটাদাগে এ বাজেট আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন এবং বিগত অর্থবছরের বাজেটের ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বর্ধিত অবস্থা ছাড়া কিছুই নয়। অথচ আইএমএফের সঙ্গে ঋণচুক্তির কথা উল্লেখই করেননি অর্থমন্ত্রী। এদিকে আইএমএফের শর্ত পূরণে বাড়তি আদায় করতে হবে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। করছাড় কমানোর বড় উদ্যোগ বাজেটে নেই।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর