রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

পন্থিকলহ আর ফটোসেশনে ছাত্র রাজনীতি

চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বারবার বিতর্কিত কর্মকান্ড করে আলোচনায় আসছে ছাত্র রাজনীতি। একদিকে ছাত্রলীগ নেতারা অবাঞ্ছিত কাজকর্ম করে গণমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্যাম্পাসে অস্তিত্ব না থাকলেও অভ্যন্তরীণ কলহের কারণে সংকটে ছাত্রদল জর্জর। একসময় কিছু কিছু কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে তাদের অস্তিত্ব বিলীনের পথে। এমনকি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও কোণঠাসা ছাত্রদল। নগরে ছাত্রলীগ দুই ভাগে বিভক্ত। দুই পন্থিদের মধ্যে কলহ দেখে নেতারা বিব্রত। একটি অংশ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুরাগী, অন্যটি চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আ জ ম নাছির বলেন, ছাত্র রাজনীতির নামে যা হচ্ছে তা সত্যিই বিব্রতকর। চট্টগ্রাম কলেজ চট্টগ্রামের সেরা কলেজ ছিল, কিন্তু কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে ফলের দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ছে। এর মূল কারণ ক্যাম্পাসে অস্থিরতা এবং শিক্ষার পরিবেশ না থাকা। সুষ্ঠু ধারার রাজনীতিচর্চা করতে হবে সবাইকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় যারা রাজনীতির নামে পরিবেশ অশান্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ক্যাম্পাসে সব দলের রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে সেভাবে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগও স্বৈরাচারী করছে, কোনো দলকে রাজনীতির সুযোগ দিচ্ছে না। নিজেরা ক্যাম্পাসে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হচ্ছে এবং তা নিয়ে সংঘাতে জড়াচ্ছে। এতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং গুণগত মান কমছে।’ জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় ছাত্র রাজনীতির সহাবস্থান ছিল। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ছাত্র সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন জিএস পদে ছাত্রলীগের আজিম উদ্দীন, এজিএস পদে ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুবের রহমান শামীম ও ভিপি ছিলেন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নাজিম উদ্দীন। তবে এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ছাত্রলীগের। এককাধিপত্যের কারণে বিরোধী সংগঠনের সঙ্গে সংঘাতের পরিবর্তে নিজেরা নিজেরাই জড়াচ্ছে সংঘাতে। চবি ছাত্রলীগের একটি অংশ মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী, অন্যটি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। চবি শাখায় ছাত্রদলের দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার কারণে ক্যাম্পাসে তেমন কর্মকান্ড নেই। ছাত্রদলের কমিটি না থাকলেও তিন-চারটি গ্রুপ ক্যাম্পাসের বাইরে সক্রিয়।

অন্যদিকে নগরীর বেশির ভাগ কলেজই এখন ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। কয়েক দশক ধরে নগরের এমইএএস কলেজ, ইসলামিয়া কলেজ, সিটি কলেজ, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। এমনকি বিএনপি আমলেও এসব কলেজ ছিল ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণাধীন। টানা তিনবার ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ শিবির তাড়িয়ে দখল নেয় ছাত্রলীগ। তবে সম্প্রতি এসব কলেজে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে। এসব আহ্বায়ক কমিটিকে অবশ্য কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে দেখা যায় না। অন্যদিকে পাহাড়তলী কলেজ, আইন কলেজ, বাকলিয়া কলেজ, বার আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে একসময় ছাত্রদল সক্রিয় থাকলেও সেসব কলেজে তাদের আর আগের সেই জলুশ নেই। বলতে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এখন ছাত্রলীগই সর্বেসর্বা। অন্যদিকে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে ভীতি বিরাজ করছে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। ফলে তারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার চিন্তাই বাদ দিয়েছে। বরং ক্যাম্পাসের বাইরে কলেজের ব্যানারে কয়েকজন নিয়ে ফটোসেশন করে শেষ করছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।

প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও আধিপত্য প্রশ্নে নিজেরা নিজেদের সঙ্গে কলহে লিপ্ত। কিছু কলেজ মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীদের দখলে আবার কিছু রয়েছে আ জ ম নাছিরের দখলে। তার মধ্যেই কখনো নাছির-নওফেল অনুসারীরা লিপ্ত হন সংঘর্ষে আবার কখনো দেখা যায় একটি গ্রুপের উপগ্রুপ গ্রুপে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস একসময় আ জ ম নাছির অনুসারীদের দখলে থাকলেও মহিবুল চৌধুরী চমেক পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর পাল্টে যায় ছবি। নতুন করে চমেক ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে উঠেপড়ে লাগে তাঁর অনুসারীরা। আর এ অবস্থান তৈরি করতে গিয়ে বারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়েন হবু ডাক্তাররা।

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ওমর গনি এমইএস কলেজে বক্তব্য দিতে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ায় এক শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করেন রাকিব হায়দার নামে এক শিক্ষার্থী। যিনি নগরীর ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ক্যাম্পাসে আরশাদুল আলম বাচ্চুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শিবির সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আলোচনায় আসে চমেক ছাত্রলীগ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের নির্দেশে হামলা করা হয়েছে তারই একসময়ের অনুসারী রমজানের ওপর। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। তাতে ছাত্রলীগ সভাপতি দাবি করেছেন, ‘ক্যাম্পাসে সবাই তাকে ভয় পায়’।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর