সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
সিলেট সিটি নির্বাচন

পাল্টে যাচ্ছে প্রচারণার কৌশল

স্মার্ট সিটি করতে চান আনোয়ার, বিরামহীন প্রচারণায় বাবুল-মাহমুদুল

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

পাল্টে যাচ্ছে প্রচারণার কৌশল

সিলেটে প্রচারণায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলনের মাহমুদুল হাসান -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণায় তত পরিবর্তন আসছে। ভোট ব্যাংক ও ভোটারদের মেজাজ বুঝে তারা পাল্টাচ্ছেন প্রচারণার কৌশল। নির্বাচনের শুরুতে সব প্রার্থী মিলে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। এখন সেখান থেকে ফিরে উল্টো আরিফের প্রশংসা করছেন কেউ কেউ। নির্বাচিত হলে আরিফের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তেরও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। শুরুতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ ও ইভিএম নিয়ে যেসব প্রার্থী স্বস্তির কথা বলেছিলেন এবং তারা বোল পাল্টে বলছেন উল্টো কথা। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও ভোটের মাঠে বিশেষ সুবিধা করে নিতে প্রার্থীরা প্রচারণায় কৌশল পাল্টাচ্ছেন বলে মনে করছেন নগরবাসী।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দে আগেই প্রচারণায় নামেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। প্রচারণার শুরুতে তিন প্রার্থীই একজোট হয়ে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সমালোচনা করেন। আরিফের অপরিকল্পিত কাজের জন্য সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ নগরবাসীর কোনো উপকারে আসেনি বলে দাবি করেন তারা। এ ছাড়া আরিফের বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজে অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ তুলেন তিন মেয়র প্রার্থী। প্রকাশ্যে বক্তৃতা বিবৃতিতে তারা আরিফুল হক চৌধুরীকে টার্গেট করে এমন অভিযোগ করেন। ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও সিলেট এসে অপরিকল্পিত উন্নয়নের অভিযোগ করেন আরিফের বিরুদ্ধে। কিন্তু আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দেওয়ার পর পাল্টাতে থাকে দৃশ্যপট। একই দিনে আরিফের বাসায় ছুটে যান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম বাবুল। নির্বাচনে সহযোগিতা চান তার। আরিফের ভোট ব্যাংক নিজেদের দখলে নিতে মেয়র প্রার্থীরা নানাভাবে চেষ্টা শুরু করেন। আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে নজরুল ইসলাম বাবুলের সখ্য অনেক পুরনো। তাই শেষ মুহূর্তে আরিফের গোপন ইঙ্গিতের আশা করছেন তিনি। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে ধরাশায়ী করতে আরিফ তার সমর্থক-শুভাকাক্সক্ষীদের গোপন নির্দেশ দিতে পারেন এমন আশা করছেন বাবুল। এ জন্য তিনি আরিফের সমালোচনা থেকে সরে এসেছেন।

এদিকে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও তার প্রচারণায় পরিবর্তন এনেছেন। তাকেও এখন আগের মতো আরিফের কঠোর সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে না। মেয়র নির্বাচিত হলে মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে পরিকল্পিত নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সূত্র জানিয়েছে, আনোয়ারুজ্জামানও চাইছেন না আরিফের বিরাগভাজন হতে। আরিফ যাতে কোনো অবস্থায়ই বাবুল কিংবা ইসলামী আন্দোলনের মাহমুদুল হাসানের পক্ষাবলম্বন না করেন সেটাই চাইছেন আনোয়ার। এদিকে, নজরুল ইসলাম বাবুল প্রচারণার শুরুতে নির্বাচনী পরিবেশ ও ইভিএম নিয়ে বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। প্রচারণায় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীরও প্রশংসা করেন তিনি। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই তিনি কৌশল পাল্টে সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছেন। সরকারবিরোধী ভোট টানতে তিনি প্রচারণায় সরকারের সমালোচনা করছেন। সরকারের অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদস্বরূপ মানুষ লাঙ্গলে ভোট দেবে প্রচারণায় এমন বক্তৃতাও দিচ্ছেন। ইভিএম নিয়ে শুরুতে সন্তুষ্ট থাকলেও এখন বলছেন সংশয়ের কথা। ইভিএমের সঙ্গে ভোটারদের পরিচয় না থাকা এবং সঠিকভাবে ভোট গণনা নিয়ে তার সংশয়ের কথা প্রায়ই বলছেন।

স্মার্ট সিটি করতে চান আনোয়ার, বিরামহীন প্রচারণায় বাবুল মাহমুদুল : সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র প্রার্থীরা। প্রচারণার সময় প্রার্থীরা ভোটারদের দিয়ে যাচ্ছেন নানা রকম প্রতিশ্রুতি। কেউ বলছেন নান্দনিক শহরের কথা, কারও প্রতিশ্রুতি ক্লিন ও স্মার্ট সিটির। গতকাল প্রচারণাকালে স্মার্ট সিটি গড়তে নগরবাসীর সমর্থন চান আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়েছেন জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান।

গতকাল সকাল ১১টায় নগরীর টিলাগড়ে গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দুপুর ১২টায় তালতলায় ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে ও বিকাল ৩টায় নেত্রকোনা সমিতির সঙ্গে ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডের একটি স্কুলে সিলেটের নেত্রকোনা সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সন্ধ্যা ৭টায় কালীবাড়ি পয়েন্টে ও রাতে নগরীর শাহীঈদগাহ ও মিরাপাড়ার আবদুল লতিফ প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পথসভায় বক্তব্য রাখেন আনোয়ারুজ্জামান।

পৃথক পথসভায় তিনি বলেন, সবার সহযোগিতায় নির্বাচিত হলে সিলেটকে একটি স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের উন্নয়নের ব্যাপারে আন্তরিক। সিলেটবাসীর জন্য তার ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. আবদুল মোমেনও উন্নয়নের ব্যাপারে আন্তরিক। তাদের সবার সহযোগিতায় স্মার্ট সিটির স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘২১ জুনের নির্বাচনে সবাই ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আমি জানি, আপনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসায় আমি ধন্য। এখন ভোট কেন্দ্রে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। অবশ্যই সবার দোয়া ও ভালোবাসায় নৌকার জয় হবে ইনশা আল্লাহ।’

গণসংযোগ ও পথসভায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলার আজাদুর রহমান আজাদ, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার প্রমুখ।

এদিকে, গতকাল সকাল সাড়ে ১২টায় আদালতপাড়ায় গণসংযোগ করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। এ ছাড়াও তিনি নগরীর বাগবাড়ী এতিম স্কুল রোড, নরসিংটিলা ও শাহীঈদগাহ এলাকায় নির্বাচনী পথসভা করেন।

পৃথক সভায় বাবুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিনিয়ত অন্যান্য প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলছেন। তাতে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। ফলে আমি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত। তারপরও আমি আমার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এই নগরবাসী আমাকে ভালোবাসেন, তারা আমাকে ২১ জুনের নির্বাচনে তাদের আমানত দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবেন ইনশা আল্লাহ।’ গণসংযোগকালে নজরুল ইসলাম বাবুলের সঙ্গে জাতীয় পার্টির স্থানীয় ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে, প্রচন্ড গরম ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। গতকাল তিনি ২৪, ৩১ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। পথসভা করেছেন মুরাদপুর বাজার, মুক্তির চক, মীরের চক, মেজরটিলা, টিলাগড় পয়েন্ট ও মিরাপাড়ায়। উঠান বৈঠক করেছেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়াইপাড়া, ও ডলিয়া টিলাগাঁওয়ে।

এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন তাহলে গেল ২০ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে পাঁচ বছরে আমি এর চেয়ে বেশি উন্নয়ন উপহার দেব- ইনশা আল্লাহ। দুর্নীতি ও চুরি বন্ধ করে সততা এবং আমানতদারির মাধ্যমে কাজ করলে অবশ্যই নগরবাসীর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।

গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট জেলা শাখার সহসভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ আমীর উদ্দীন ও সেক্রেটারি হাফেজ মাওলানা ইমাদ উদ্দিন প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর