বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে গেল সিলেট

পানি নিষ্কাশন নিয়ে সড়ক অবরোধ সংঘর্ষ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে গেল সিলেট

বৃষ্টিতে ডুবে গেল সিলেট :- তিন ঘণ্টার ভারী বর্ষণে গতকাল সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ সময় বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। বাসাবাড়িতে ঢুকে যায় পানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

তিন ঘণ্টার ভারী বর্ষণে সিলেট নগরজুড়ে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। দিনভর সেই জলাবদ্ধতায় ভুগেছেন নগরবাসী। বৃষ্টি থামার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে কোনো কোনো স্থান থেকে পানি নেমে গেলেও অনেক স্থানে পানি নামতে পুরো দিন লেগে গেছে। ড্রেন ও ছড়া-খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলা এবং সদ্য কাজ শেষ হওয়া ড্রেন থেকে ঠিকাদাররা নির্মাণসামগ্রী অপসারণ না করায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি নগর ভবনের প্রকৌশল শাখার। এদিকে পানি নিষ্কাশন নিয়ে গতকাল দুপুরে নগরীর বাদাঘাট এলাকায় দুই এলাকার লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ভারী বর্ষণ হয়। তিন ঘণ্টায় নগরীতে ৪৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এই বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। নগরীর দাড়িয়াপাড়া, বিলপাড়, শেখঘাট, হাওয়াপাড়া, মজুমদারপাড়া, সোনারপাড়া, সেনপাড়া, মাছিমপুর, ভাতালিয়া, নয়াপাড়া, বাঘবাড়ি, শামীমাবাদ, রাজারগলি, যতরপুর, সাদিপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যায়। রাস্তাঘাট তলিয়ে যায় পানিতে। এতে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। নগরীর ভাতালিয়া এলাকার বাসিন্দা সুব্রত দাশ বলেন, সকালে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে বাসার ভিতর পানি উঠে যায়। ড্রেন উপচে রাস্তায় হাঁটু পানি জমে। ফলে সকালে শিশুরা স্কুলে যেতে পারেনি। পানি উঠে বাসার সব আসবাবপত্র ভিজে গেছে।’ এদিকে বর্ষার শুরুতে এই জলাবদ্ধতার জন্য ড্রেন ও ছড়া-খালে ময়লা আবর্জনা ফেলাকে দায়ী করছে নগর ভবনের প্রকৌশল শাখা। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ‘অনেকেই ময়লা-আবর্জনা ও প্লাস্টিক সামগ্রী ছড়া-খাল ও ড্রেনে ফেলে দেন। বৃষ্টি হলে এগুলো আটকে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ ছাড়া সদ্য কাজ শেষ হওয়া বিভিন্ন এলাকার ড্রেনের ভিতর ঠিকাদাররা উচ্ছিষ্ট নির্মাণসামগ্রী ফেলে রেখেছিলেন। কোনো কোনো স্থানে কাজের সুবিধার্থে ড্রেনের মধ্যে ঠিকাদাররা বাঁধ দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ শেষে সেগুলো অপসারণ করেননি। তাই এ রকম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।’

এদিকে পানি নিষ্কাশন নিয়ে সিলেট নগরীর বাদাঘাটে তুলকালাম কা ঘটেছে। পানি নিষ্কাশন নিয়ে দুই এলাকার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন পুলিশসহ অর্ধশত। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন।

জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ও গতকাল সকালের বৃষ্টিতে কুমারগাঁও বাদাঘাট সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ওই সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলায় সড়কের মাটি খুঁড়ে পাশে রাখায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে পানি স্থানীয় অনেকের বাড়িতে উঠে যায়। পানি নিষ্কাশনের জন্য গতকাল সকাল ১১টার দিকে মইয়ারচর, নয়া খুরুমখলা, নাজিরেরগাঁও ও শিমুলতলা গ্রামের লোকজন কুমারগাঁও-বাদাঘাট সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের ফোন করে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। বেলা ২টার দিকে সংশ্লিষ্টরা পানি নিষ্কাশনের জন্য সোনাতলা এলাকার একটি রাস্তা কাটতে গেলে স্থানীয়রা বাধা দেন। এই বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সোনাতলা এলাকাবাসীর সঙ্গে মইয়ারচর, নয়া খুরুমখলা, নাজিরেরগাঁও ও শিমুলতলা গ্রামের লোকজনের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় উভয় পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।

প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

জালালাবাদ থানার ওসি সাইফুল আলম জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুনরায় পরিস্থিতির অবনতি যাতে না ঘটে সে জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর