বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রিন্টিং প্রেসেই তৈরি হতো নকল রেভিনিউ স্ট্যাম্প

মূল হোতাসহ গ্রেফতার ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক সময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রিন্টিং প্রেসে চাকরি করতেন। কাজের সূত্র ধরেই স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে মো. সোহেল কাজীর (৩১)। এক পর্যায়ে সাভারের আশুলিয়ায় ‘কনফিডেন্স প্রিন্টিং’ প্রেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ছাপতে শুরু করেন তিনি। দেখে বোঝার উপায় ছিল না সেগুলো আসল, নাকি নকল। পরবর্তীতে নিজেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবারের সদস্যদেরই ব্যবসায় অন্তর্ভুক্ত করত তারা। এমনই এক সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৪ এর একটি দল। সবশেষ সত্যতা নিশ্চিত হয়ে ঢাকার আশুলিয়া ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি চক্রের অন্যতম হোতা মো. সোহেল কাজীসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন-  সোহেল কাজী, মো. জাহাঙ্গীর আলম ওরফে জাহিদ, মো. সোহেল রানা, মো. সাব্বির হোসেন, মোছা. সাবিনা ইয়াছমিন, মোছা. শাহনাজ আক্তার, কামরুল হাসান, মো. সুমন, বিল্টু ও  মো. সেন্টু মিয়া।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, এই চক্রটির সঙ্গে বিভিন্ন অনুমোদিত ভেন্ডারদের সুসম্পর্ক থাকায় তারা সব অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করতেন। ২ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো এসব জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প। প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ রিম কাগজের এসব অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করত চক্রটি। চক্রের সদস্যরা এই টাকা দিয়ে গড়েছেন বাড়িসহ বিভিন্ন সম্পত্তি। আর এতে বছরে ২২ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল স্ট্যাম্প ও অন্য সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।

খন্দকার মঈন আরও বলেন, চক্রটি প্রায় দুই বছর ধরে ঢাকার আশুলিয়ার বলিভদ্র এলাকায় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছিল। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প চিহ্নিতকরণ সহজ না হওয়ায় এবং অধিক মুনাফা লাভের আশায় তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি ও বিক্রি করতেন।

আশুলিয়ার ‘কনফিডেন্স প্রিন্টিং’ প্রেসের মালিক ও অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে এই কাজ করে আসছিলেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, কনফিডেন্স প্রিন্টিং প্রেসে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প মুদ্রণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন গ্রেফতার সাব্বির, সুমন, কামরুল সেন্টু ও বিল্টু। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প মুদ্রণের পর পারফেক্ট মেশিনের মাধ্যমে কাটিং ও ছিদ্র করা হতো। পরবর্তী সময় জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরা, বনানী, গুলশান, সাভার, টঙ্গীসহ  দেশের বিভিন্ন আদালতে কোর্ট ফি ও অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হতো।

নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবে এরা পরিবারের সদস্যদেরই ব্যবসায় অন্তর্ভুক্ত করত উল্লেখ করে খন্দকার মঈন বলেন, অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির চাহিদা বেড়ে গেলে সোহেল কাজী এই কাজে স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিনসহ স্ত্রীর বড় ভাই সোহেল রানাকেও সম্পৃক্ত করে। তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিন বাসা থেকে মালামাল ডেলিভারি ও আর্থিক বিষয় দেখাশোনা করতেন। প্রিন্টিং প্রেসে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ছাপানোর পর সোহেল রানার বাসায় পারফেক্ট মেশিনের মাধ্যমে কাটিং ও ছিদ্র করাসহ পরবর্তী ধাপের কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন। এ ছাড়া তার একটি নিজস্ব ট্রাক রয়েছে। ওই ট্রাকের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে মালামাল পরিবহনের আড়ালে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করতেন। একই ভাবে গ্রেফতার জাহাঙ্গীর তার স্ত্রী শাহনাজ স্বামীকে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি, বিক্রয় ও বহনকারী হিসেবে সহযোগিতা করতেন। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে মানিকগঞ্জ জেলা সদরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর