শিরোনাম
শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

আমদানি নেই আখাউড়া বন্দরে রাজস্ব আদায় তলানিতে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

আমদানি নেই আখাউড়া বন্দরে রাজস্ব আদায় তলানিতে

টাকা ও রুপির বিপরীতে ডলারের ঊর্ধ্বগতির কারণে মন্দাভাব বিরাজ করছে আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। বিগত অর্থবছরগুলোর তুলনায় ভারতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কমেছে ৫০ ভাগের বেশি। আর শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে আমদানি বাণিজ্য। ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদামতো পণ্য আমদানির সুযোগ না পাওয়ায় বন্ধ রেখেছেন যাবতীয় আমদানি কার্যক্রম। এর ফলে তলানিতে ঠেকেছে সরকারের রাজস্ব আদায়। বন্দরসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে সব ধরনের পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। তবে বিপরীতে আমদানি করা যায় নির্ধারিত কিছু পণ্য। যার মধ্যে আছে গবাদি পশু, মাছের পোনা, চুনাপাথর, চাল, ভুট্টা, গম, আদা, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আগরবাতি, পান, টম্যাটো, বিটুমিন, ফ্লাই অ্যাশ, মারবেল চিপস, ফায়ার ক্লে, ভাঙা কাচ, জেনারেটরসহ ৫০টির বেশি পণ্য। তবে এর বেশির ভাগ পণ্যের চাহিদা না থাকায় আমদানি করেন না ব্যবসায়ীরা।

কিছু পণ্যের চাহিদা থাকলেও ত্রিপুরার বাইরের রাজ্য থেকে আমদানি করে ভালো মুনাফা করা যায় না। এজন্য এসব পণ্যও আমদানি বন্ধ রয়েছে।

এদিকে বিগত অর্থবছরগুলোর তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ অর্ধেকের বেশি কমেছে। মূলত ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে কিছুটা ভাটা পড়ে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে পরের বছর মহামারির ধকল কাটিয়ে আবারও চাঙা হতে থাকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। তবে নতুন করে রপ্তানি বাণিজ্যে আবারও সংকট তৈরি করছে ডলারের ঊর্ধ্বগতি। রুপির বিপরীতে ডলারের ঊর্ধ্বগতিতে আমদানি খরচ বাড়ায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য নেওয়া কমিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ মার্কিন ডলারের ভোজ্য তেল, সিমেন্ট, হিমায়িত মাছ, প্লাস্টিকসহ কয়েকটি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয় ৬৯৭ কোটি ৭০ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ টাকার পণ্য। একই সময় ভারত থেকে আমদানি হয় ১ কোটি ৯ লাখ ৯২ হাজার ২১৮ টাকার পণ্য। এ থেকে সরকারের রাজস্ব আসে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৮ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয় ৬৮০ কোটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৪ টাকার পণ্য। বিপরীতে আমদানি হয় ২৮৮ কোটি ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৮ টাকার পণ্য। এ থেকে সরকার রাজস্ব পায় ৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১০ টাকা।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে গত মে মাস পর্যন্ত ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৩৫০ কোটি ৬২ লাখ ১০ হাজার ১৯২ টাকার পণ্য। আর আমদানি হয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার ৫১৪ টাকার পণ্য; যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৫ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৯ টাকা।

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় এক বছর ধরে গম আমদানি করতে পারছেন না তারা। গত বছরের ৩০ মে’র পর গমের আর কোনো চালান আসেনি বন্দরে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ২ হাজার ৭০০ টন চূর্ণ পাথর ও মার্চের প্রথম সপ্তাহে ৩৮ টন ভাঙা পাথর এবং সবশেষ সোমবার ১০ টন পিঁয়াজ আমদানি হয়। যেসব পণ্য আমদানির অনুমতি আছে, তার বেশির ভাগই ত্রিপুরার বাইরের রাজ্য থেকে আনতে হয়। ফলে আমদানি খরচ বেড়ে যায়। এ ছাড়া এখন ডলার সংকটের কারণে চাহিদামতো এলসিও করা যাচ্ছে না।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, কখন কোন পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে তা আগে থেকে বলা যাবে না। সেজন্য সব পণ্য আমদানির অনুমতি প্রয়োজন। যাতে যখন যে পণ্যের চাহিদা থাকবে, তখন যেন সেই পণ্য আমদানি করা যায়। যদি এ সুযোগটি দেওয়া হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে। পাশাপাশি আমদানি না হওয়ায় এখন বন্দরে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা কেটে গিয়ে বন্দর আরও চাঙা হবে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত অর্থবছরগুলোর তুলনায় এবার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ একেবারেই কম। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান স্থলবন্দর পরিদর্শনে এলে ব্যবসায়ীরা সুনির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্যের তালিকা দেন আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। রাজস্ব বোর্ড থেকে তালিকার পণ্যগুলো আমদানির অনুমতি দিলে আবারও বন্দর দিয়ে আমদানি বাড়বে বলে আশা করছি। আর আমদানি বাড়লে বন্দর এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর