মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বপ্নের রেলযাত্রা নিয়ে শঙ্কা

ঈদের পর শুরু কালুরঘাট রেলসেতু সংস্কার কাজ

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হলেও আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালু করা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এই পথে ট্রেন যেতে প্রধান বাধা ঝুঁকিপূর্ণ কালুরঘাট সেতু। সেতুটির সংস্কার কাজ ঈদের পর শুরু হলেও অন্তত তিন মাসের আগে তা শেষ হবে না। ফলে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বপ্নের এই রেল যোগাযোগ চালু করা নিয়ে শঙ্কা আছে। যদিও দ্রুত সময়ে সংস্কার কাজ শেষ করতে চায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কালুরঘাট সেতু সংস্কারের জন্য ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত রবিবার চুক্তি করেছে রেলওয়ে। চুক্তি অনুযায়ী ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রেল চলাচলের উপযোগী করে সেতু সংস্কার কাজ শেষ করবে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ওয়াকওয়েসহ কিছু আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করতে বাড়তি সময় লাগবে।

নির্দিষ্ট সময়ে সংস্কার শেষ করে যাতে অন্তত অক্টোবরের মধ্যে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ চালু করা যায় সে ব্যাপারে রেলওয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেহেতু চুক্তি হয়ে গেছে কাজ শুরু করতে আর কোনো বাধা নেই। তবে ঈদুল আজহার কারণে এই মুহূর্তে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হবে না। তবে ঈদের পর সেতুর সংস্কার কাজ পুরোদমে শুরু হবে। এর মধ্যে দালিলিক ও যান্ত্রিক বিষয়গুলো এগিয়ে নেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিকভাবে তিন মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।’

রেল কর্মকর্তারা জানান, দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন চালু হলে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি হবে ৯০-১০০ কিলোমিটার। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এই গতিতে সেতুতে ট্রেন চালানো অসম্ভব।

তাই নতুন সেতু নির্মাণের আগ পর্যন্ত এই সেতু সংস্কার করে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংস্কার কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচল উপযোগী করতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও সংস্কারের পরও ৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে এই সেতুতে ট্রেন চালানো যাবে না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সেতুর ১৯টি স্প্যানের মধ্যে ৮টির অবস্থা খুবই নাজুক। এগুলো অনেকটা ক্ষয়ে গেছে। এ ছাড়া সেতুর অন্যান্য স্প্যন, পাটাতনসহ বেশ কিছু অংশ চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ৯৩ বছর বয়সী এই সেতুতে বর্তমানে ১০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চলাচল নিষিদ্ধ।

বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত এপ্রিলে সেতু সংস্কারের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়। ১৮ মে টেন্ডার উন্মুক্ত করে দাফতরিক যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর টপপ্লেট পরিবর্তন, স্প্যান পুনস্থাপন, ডেডিকেটেড ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ অন্তত ১০ বছর চলাচল উপযোগী করে সেতুটি সংস্কার করবে।

প্রসঙ্গত, পর্যটন নগরী কক্সবাজার ভ্রমণকে স্বাচ্ছন্দ্যময় ও নিরাপদ করতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। রেলমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই পথে ট্রেন চালু করার লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর