বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

খুলনায় এলপিজির অবৈধ ক্রস ফিলিং!

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

বন্ধ থাকা খুলনা অক্সিজেন লিমিটেড কোম্পানির আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এলপি গ্যাসের অবৈধ ‘ক্রস ফিলিং’। এখানে রাতের আঁধারে বিভিন্ন কোম্পানির সিলিন্ডারে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গ্যাস ভরে তা বাজারজাত করা হয়। ওজন ঠিক রাখতে পানি, বালু দেওয়া হয় সিলিন্ডারের মধ্যে। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সেই সঙ্গে কম ওজনের এলপি গ্যাস কিনে প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহকরা।

জানা যায়, সোমবার রাত ১১টার দিকে নগরীর রূপসা শিপইয়ার্ড এলাকায় খুলনা অক্সিজেন লিমিটেড থেকে বের হওয়া এলপি গ্যাস বোঝাই একটি ট্রাক (পিরোজপুর ট ১১-০১৯৪) আটক করে পুলিশ। এতে অবৈধভাবে ফিলিং করা বিভিন্ন কোম্পানির ৪৬২টি সিলিন্ডার ছিল বলে জানা যায়।  পরে খুলনা অক্সিজেন লিমিটেডের ভিতরে এলপি গ্যাস রিফিল করার মেশিন-যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়। বিষয়টি বিস্ফোরক অধিদফতর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে জানানো হয়েছে। সিলিন্ডারসহ ট্রাকটিকে খুলনা অক্সিজেন লিমিটেড কোম্পানির ভিতরে আটক রেখেছে পুলিশ।

এদিকে এ ঘটনায় বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের পক্ষ থেকে লবণচরা থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সোমবার রাত ১১টার দিকে খুলনা অক্সিজেনের প্রোপাইটার মাশফু ববী তার প্লান্টে ৪৬২ পিস সিলিন্ডার অবৈধভাবে রিফিল করেন। যার মধ্যে বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ৩০০ পিস। দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন এলাকা থেকে এলপি গ্যাসের খালি সিলিন্ডার ক্রয় করে এখানে অবৈধভাবে ফিলিং করা হয়। ওজন ঠিক রাখার জন্য পানি, বালুসহ সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিল করা হয়। তিনি বিভিন্ন গ্রাহক ও রিটেইলরের খালি গ্যাস সিলিন্ডার সংগ্রহ করে তাতে অবৈধ রিফিল ও বাজারজাত করেন। এতে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।

এ বিষয়ে লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক বলেন, রাতের বেলা অবৈধ এলপি সিলিন্ডার ফিলিংয়ের খবর পেয়ে ট্রাকটিকে আটক করা হয়। কিন্তু এটা পুলিশের বিষয় নয়। বিস্ফোরক অধিদফতর বা ভোক্তা অধিকার অধিদফতর ওই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আছে কি না যাচাই করতে পারে। তাদের এ বিষয়ে জানানো হচ্ছে।

তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, যেহেতু বিস্ফোরক অধিদফতরের ঝুঁকিপূর্ণ এলপি সিলিন্ডার জব্দ, সেগুলো নিষ্ক্রিয় করাসহ এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। সে কারণে তাদের লোকজন ঘটনাস্থলে এলে আমরা সেখানে যাব।

অপরদিকে বিস্ফোরক অধিদফতর, খুলনার কর্মকর্তা অশোক কুমার দাস জানান, ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে আমরা ঘটনাস্থলে যাব। তবে তিনি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা কিংবা ভোক্তা অধিকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে বলে পরামর্শ দেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট খুলনা অক্সিজেন লিমিটেড কোম্পানির ভিতরে ৯টি কোম্পানির কয়েক হাজার খালি সিলিন্ডার মজুদ অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই সময় এলপি গ্যাসের রিজার্ভার ট্যাংক ও সিলিন্ডারে এলপি গ্যাস রিফিল করার মেশিন-যন্ত্রপাতিও সেখানে পাওয়া যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে রাতের আঁধারে অক্সিজেন লিমিটেডের ভিতরে মজুদ রাখা খালি ও ভরা সিলিন্ডার কয়েকটি ট্রাকে করে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়।

এ ছাড়া ২০২২ সালের ২৬ আগস্ট নগরীর হরিণটানা এলাকায় অটো গ্যাস পাম্পের আড়ালে ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বাজারজাতকরণে তাসমিম হাসান মিলন নামের এক ব্যক্তিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

সর্বশেষ খবর