বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্যে নিয়োগ জালিয়াতি দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান, কার্ডিওগ্রাফারসহ আড়াই হাজার পদের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই অভিযোগে নিয়োগ কমিটির সভাপতি, সাবেক পরিচালকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সংস্থাটির ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক ফারুক হোসেন মামলাটি করেন। দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শফিউল্লাহ জানান, মামলার আসামিরা হলেন নিয়োগসংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিচালক মো. হাসান ইমাম, সদস্যসচিব আ খ ম আখতার হোসেন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শাওকত আলী। দুদকসূত্র বলছেন, মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে খাতা প্রণয়ন ও খাঁটি হিসেবে ব্যবহার এবং অফিশিয়ালি সরবরাহ করা উত্তরপত্র বর্তমানে থাকা উত্তরপত্র দ্বারা কোনো একপর্যায়ে প্রতিস্থাপিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

 তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭(ক) ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি করা হয়।

এজাহারসূত্রে জানা গেছে, কভিডে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১ হাজার ২০০, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ১ হাজার ৬৫০, কার্ডিওগ্রাফারসহ ২ হাজার ৭৯৮ শূন্যপদে জনবল নিয়োগের ছাড়পত্র প্রদান করে সরকার। ২০২০ সালের ৩০ জুন জাতীয় দৈনিকে তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আবেদনের শেষ সময় ছিল ২০ জুলাই। বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে মোট ৭২ হাজার ৬১৫ জন আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগ। নিয়োগ পরীক্ষার মধ্যে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইসিজি) পদে ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (এনেসথেসিয়া, ডায়ালাইসিস, কার্ডিওগ্রাফার, বায়োমেডিকেল, ইটিটি, পারফিউশনিস্ট, সিমুলেটর, অর্থোপেডিকস, ইকো) পদে ১৯ ডিসেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেন্দ্র থেকে খাতা বুঝে নেন। নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপপরিচালক আ খ ম আখতার হোসেনের কাছে তা জমা হয়। এরপর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইসিজি) সংশ্লিষ্ট খাতা মূল্যায়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শাওকত আলীকে হস্তান্তর করা হয়।

অন্যদিকে মেডিকেল টেকনিশিয়ান (অন্যান্য) পদের লিখিত খাতা মূল্যায়নের জন্য খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদের কাছে জমা দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রাতে সিন্ডিকেটের কতিপয় সদস্য পুনরায় নতুন খাতায় প্রশ্নের উত্তর লিখে প্রতিস্থাপন করেন। খাতার কাভার পেজে একাধিকবার স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র কিন্তু মূল খাতায় একবার স্ট্যাপলিং এবং উত্তরপত্রের বিভিন্ন স্থানে পেনসিলে লেখা অস্পষ্ট সংকেতের প্রমাণ মেলে।

উত্তীর্ণ ৪ হাজার ৪৫৩টি খাতা, টেবুলেশন শিট ও অন্যান্য উপকরণ পরীক্ষার পর ২ হাজার ৪১১টি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র এবং পেনসিলে লেখা বিভিন্ন ধরনের সংকেতের প্রমাণ পান দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। এসব বিষয়ে চাকরিপ্রার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা কোনো সঠিক তথ্য দুদককে দিতে পারেননি। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ক্ষেত্রবিশেষ ১৫-২০ লাখ টাকা নেওয়ার তথ্য মেলে।

সর্বশেষ খবর