বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জাল নোট বিক্রি করত ওরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের বাজারকে টার্গেট করে জাল নোট বিক্রির জন্য ফেসবুকে এ গ্রেড জাল নোট, টাকা চাই, জাল নোট, জাল টাকা বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয় কেন্দ্র, রিয়েল সেলস্, টাকা বিজনেসসহ বিভিন্ন নামে পেজ ও গ্রুপ খুলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এরপর জাল টাকা কিনতে আগ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে জাল টাকা ডেলিভারি দিচ্ছিল শাহজাদা আলম। চক্রটি ইতোমধ্যে জাল টাকার বড় ধরনের চারটি ডেলিভারি দিয়েছে। সর্বশেষ ১৫ জুন এ গ্রেড জাল নোট গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিয়ে ৫ লাখ টাকার জাল নোটের একটি চালান ডেলিভারি দেয়। ৫ লাখ টাকার জাল নোট বিক্রি করে ৯০ হাজার টাকায়। সোমবার ২ লাখ টাকার জাল নোট ডেলিভারির সময় টাকা এবং মেশিন ও সরঞ্জামাদিসহ ধরা পড়েন শাহজাদা। তার সঙ্গে দুই সহযোগীও ধরা পড়েন। গতকাল টিকাটুলিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, গত সোমবার রাজধানীর উত্তরখান থানার উজাপাড়া (মাস্টারপাড়া) এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্রের অন্যতম হোতা শাহজাদা আলমকে গ্রেফতার করে র?্যাব-৩ এর সদস্যরা। অভিযানে তার সঙ্গে থাকা দুই সহযোগী মাহেদী হাসান ও আবু হুরায়রা ওরফে তুষারকেও গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯০০টি ২০০ টাকার জালনোট এবং ২০০টি ১০০ টাকার জালনোট মিলিয়ে ২ লাখ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়।

এ ছাড়া জালনোট প্রস্তুতের কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, একটি ল্যাপটপ ব্যাগ, একটি কিবোর্ড, দুটি মাউস, দুটি ল্যাপটপ চার্জার, একটি পেনড্রাইভ, ১০টি বিশেষ মার্কার পেন, টাকা ছাপানোর কাজে ব্যবহৃত প্রিন্টার, টাকার ডিজাইন প্রিন্ট করার জন্য ৪টি টোনার কার্টিজ, দুই রিম সাদা কাগজ, একটি ফয়েল পেপার রোল, তিনটি স্টিলের স্কেল, তিনটি এন্টি কাটার, একটি কাঁচি, চারটি মোবাইল, আটটি সিমকার্ড, একটি এনআইডি কার্ড ও তিনটি মানিব্যাগ জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা আরিফ বলেন, গ্রেফতার শাহজাদা, মাহেদী এবং তুষার মিলে গত ছয় মাস ধরে জাল টাকার ব্যবসা শুরু করে। মাহেদী পূর্ব থেকেই ফটোশপ এবং গ্রাফিক্সের ছোটখাটো কাজ জানত। সেটি কাজে লাগিয়ে ইউটিউব থেকে জাল টাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া দুই বন্ধু শাহজাদা ও তুষারের সহযোগিতায় জাল টাকা তৈরির কাজ শুরু করে। শাহজাদা এবং তুষার দীর্ঘদিন ধরেই জাল টাকা কেনাবেচার কাজ করে আসছে। মাহেদীকে সঙ্গে নিয়ে তারা ঈদকে টার্গেট করে জাল টাকা বানানোর কাজ শুরু করে।

জাল টাকা তৈরি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমত অনলাইন থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন নোটের ছবি ডাউনলোড করে তাদের ল্যাপটপে সংরক্ষণ ও প্রিন্টারের সাহায্যে প্রিন্ট করে। পরবর্তীতে সেসব ছবি অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে এপিঠ-ওপিঠ সমন্বয় করে লিপি গোল্ডের মোটা ও পিচ্ছিল অফসেট কাগজের ওপর এক পাতায় চারটি নোট প্রিন্ট করে। এরপর সেই কাগজে তারা গোল্ডেন কালার মার্কার দিয়ে নিরাপত্তা সুতার আদলে মার্কিং করে। সবশেষে তারা স্টিলের স্কেল এবং এন্টিকাটার-এর সাহায্যে জাল নোটগুলো কেটে বান্ডেল করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে।

তিনি আরও বলেন, কাজটি সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করতে তারা বিভিন্ন ধরনের কাগজ ব্যবহার করে। সবশেষ লিপি গোল্ডকে বেছে নেয়। এভাবে ৫০টি নোটের একটি বান্ডেল তৈরিতে তাদের খরচ হয় মাত্র ২০০ টাকা। লাখ টাকা সমমূল্যের জাল তৈরিতে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। মূল হোতা শাহজাদার বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। ২০০৮ সালে তিনি বিজিবিতে যোগ দেন। ২০২০ সালে নৈতিক স্খলন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চাকরিচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেসবুকে জালটাকা বিক্রির পেজ থেকে পরিচিত হন মাহেদী ও তুষারের সঙ্গে। তাদের নিয়ে জাল টাকা প্রস্তুতের চক্রটি গড়ে তোলেন।

সর্বশেষ খবর