বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিপদে চট্টগ্রামের কিডনি রোগীরা

বকেয়া টাকা ও কাঁচামালের সংকট, হঠাৎ বন্ধ ঘোষণা ডায়ালাইসিস

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

বিপদে চট্টগ্রামের কিডনি রোগীরা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিচতলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চালু হওয়া সেন্টার থেকে তিন শিফটে দৈনিক ৩৫ জন করে ১০৫ জন রোগী কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহণ করেন। কিন্তু গতকাল হঠাৎ ডায়ালাইসিস পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর ঘোষণা দেয়, আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে ডায়ালাইসিস সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষের এমন ঘোষণায় চরমভাবে বিপাকে পড়ছেন রোগীরা। রোগীর স্বজনদের প্রশ্ন, কী হবে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা রোগীদের। এই মুহূর্তে বিকল্প ব্যবস্থা যা আছে তা রোগীর তুলনায় অপ্রতুল। সময় মতো ডায়ালাইসিস করা না হলে রক্তস্বল্পতা, শ্বাসকষ্ট ও শরীর ফুলে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।  বকেয়া টাকা ও কাঁচামালের সংকট দেখিয়ে হঠাৎ কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রাখে। বর্তমানে চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগে সাতটি ডায়ালাইসিস মেশিন আছে। জানা যায়, ডায়ালাইসিস পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সার্ভিস বাংলাদেশ (প্রা.) লিমিটেড গত মঙ্গলবার একটি নোটিস টাঙিয়ে দেয়। নোটিসে বলা হয়, ‘আগামী ২২ জুন থেকে স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সার্ভিস সংক্রান্ত সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (অর্থ) কর্তৃক সার্ভিস পেমেন্ট পরিশোধে বারবার অনাকাক্সিক্ষত বিলম্ব ও অসহযোগিতার কারণে হঠাৎ করে এ চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।’ নোটিসে স্যান্ডর ম্যানেজারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ডায়ালাইসিসের মতো জরুরি সেবা বন্ধ করার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নাই। কিন্তু এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে সেবা চালু রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। চলমান সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের বিকল্প ব্যবস্থা রাখার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো’। ডায়ালাইসিস বন্ধের ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। করিম নামের এক রোগীর সন্তান বলেন, ‘বাবার ডায়ালাইসিস করতে এসে বন্ধের নোটিস দেখলাম। কিন্তু বাবার নিয়মিত ডায়ালাইসিস না করলে শরীরের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাকে অবশ্যই ডায়ালাইসিস করাতে হয়। এখন কী হবে বাবার। কী হবে সংকটাপন্ন রোগীদের। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, কিডনি ডায়ালাইসিস বন্ধের বিষয়টি আমরা শুনেছি। কিন্তু হঠাৎ করে এটি বন্ধ করে দেওয়ায় গরিব রোগীরা স্বল্পমূল্যের সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। একই সঙ্গে ভোগান্তিতেও পড়বেন। অনেক রোগীর ডায়ালাইসিসের সঙ্গে জীবন-মৃত্যুর সম্পর্ক। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করব। জানা যায়, ২০১৭ সালের ৪ মার্চ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে চমেক হাসপাতালে স্যান্ডর কার্যক্রম শুরু করে। চুক্তিমতে, চমেক হাসপাতালে বছরে সাড়ে ৬ হাজার সেশন ভর্তুকি মূল্যে সেবা প্রদান করবে। এর চেয়ে বেশি সেশন ভর্তুকি মূল্যে করালে বাকি টাকা মন্ত্রণালয় প্রদান করে থাকে। বর্তমানে এ সেন্টারে ৩১টি ডায়ালাইসিস মেশিন আছে। সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সুপারিশকৃত দরিদ্র রোগীরা প্রতি সেশনে ৪৮৬ টাকা ব্যয়ে ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহণ করছে। এতে সরকার প্রতি সেশনে এক রোগীর জন্য ২ হাজার ১৮০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে আসছিল।

 

 

সর্বশেষ খবর