শিরোনাম
শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রত্যাশা বাড়ছে দুই সিটিতে

ঐক্যে বিজয় নৌকার নতুন শুরুর আশা

সিলেট

শাহ দিদার আলম নবেল, সিলেট

গেল চারবারের চেয়ে এবারের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিস্থিতি ছিল আলাদা। মেয়র পদে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলত নির্বাচন ছিল সরকারদলীয় প্রার্থী ও বিরোধী জোটের। যে কারণে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঠে ঘাম ঝরাতে হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও মূলত নৌকার জয়ের পথে বড় বাধা ছিল এ দুই দলের ভোটাররা। আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটের ওপর ভর করে নির্বাচনে নিজের পক্ষে শক্ত অবস্থানও তৈরি করে নিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। কিন্তু কর্মী সংকটের কারণে শেষ পর্যন্ত নিজের পক্ষে ভোটার ধরে রাখতে পারেননি। আর দলীয় শক্ত ঐক্য ও ঘামঝরা পরিশ্রমের ফসল হিসেবে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে কাক্সিক্ষত জয় ঘরে তুলেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর জয়ের মাধ্যমে ১০ বছর পর মেয়রের আসন পুনরুদ্ধার করেছে দলটি। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একজন মেয়র ও ৪২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন ভোটযুদ্ধে। এ ৪৩ জনকে দল থেকে ‘আজীবন বহিষ্কার’ করে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ও ভোটদান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। কেউ নির্বাচনী কাজে অংশ নিলে তাকেও দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু দলের এ কঠোর বার্তা উপেক্ষা করেও বিভিন্ন কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় ছিলেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। আর জামায়াত মেয়র পদে প্রার্থী না দিলেও অন্তত ১৫টি ওয়ার্ডে তাদের প্রার্থী ছিল। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দল থেকে সহায়তা করা হয়। এ অবস্থায় ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ তথা নৌকাবিরোধী শক্ত জোট তৈরি হয়। বিরোধী এ ভোটব্যাংক নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কপালেও ভাঁজ পড়ে।

 আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন দফায় দফায় সিলেট এসে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষে মাঠে নামার তাগিদ দেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে বিভেদ ভুলে দলীয় নেতা-কর্মীরাও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে বিজয়ী করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নামেন। নৌকাবিরোধী ভোটব্যাংকের মোকাবিলায় নানা পরিকল্পনা নেন তাঁরা। ঐক্যের শক্তি দিয়ে তাঁরা বিরোধী ভোটব্যাংকে ফাটল ধরান। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের অশালীন ভিডিও ও কথোপকথনের অডিও ফাঁস হলে তাঁকে ঘায়েল করার মোক্ষম সুযোগ পেয়ে যান নৌকা সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবুলকাণ্ড ভাইরাল হলে চিড় ধরে তাঁর ভোটব্যাংকে। নৌকাবিরোধী ভোটাররা লাঙ্গল ছেড়ে ঝুঁকতে থাকেন শাহজাহান মিয়ার (শাহজাহান মাস্টার) বাসগাড়িতে। এতে শেষ পর্যন্ত অনেকটা স্বস্তি ফেরে আওয়ামী শিবিরে। টানা দুবারের হারের পরাজয় ভুলে দলীয় ঐক্যে পুনরুদ্ধার হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের আসন।

নির্বাচনের শুরুতে নৌকাবিরোধী ভোটের আওয়াজ লাঙ্গলের পক্ষে গেলেও শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। কর্মী সংকটের কারণে সিটির ৪২টি ওয়ার্ডে প্রচারণাই চালাতে পারেননি বাবুল। নিজেও যেতে পারেননি সব ওয়ার্ডে। সিলেট সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগবিরোধী ভোটারের সংখ্যা বেশি হলেও সাংগঠনিক অবস্থান না থাকা ও কর্মী সংকটের কারণে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। নতুন ওয়ার্ডগুলোয় প্রচারণায়ই যাননি বাবুল। সব ওয়ার্ডে তাঁর পোস্টারও পৌঁছায়নি। দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দীন খালেদ ও মহানগরের সদস্যসচিব আবদুস শহীদ লস্কর বশিরকে সঙ্গে নিয়ে পুরো নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে হয়েছে। এর বাইরে জেলা ও মহানগরের শীর্ষ কোনো নেতা তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। ফলে শুধু নগরীর ব্যস্ততম এলাকায়ই তাঁর প্রচারণা সীমাবদ্ধ ছিল। এর পরও নৌকাবিরোধী ভোটের ওপর ভর করে লাঙ্গলের পক্ষে যে জোয়ার উঠেছিল কর্মী সংকটের কারণে তা ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ফলে নৌকাবিরোধী ভোটাররা ‘ভোট কাজে আসবে না’ জেনেও অন্য প্রার্থীদের দিকে ঝুঁকতে থাকেন।

নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল) ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পরও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মাহমুদুল হাসান হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ১২ হাজার ৭৯৪ ভোট। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী শ্রমজীবী শাহজাহান মিয়া বাস প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৬৮৮ ভোট। শাহজাহান মিয়া পেশায় হকার। বাইসাইকেলে তিনি দোকানে দোকানে মোমবাতি বিক্রি করেন। এই তিন প্রার্থী মিলে পেয়েছেন ৯৩ হাজার ৩৪৪ ভোট। এ ছাড়া বাকি চার প্রার্থী মিলে পেয়েছেন আরও ১৩ হাজার ৩০৮ ভোট। অর্থাৎ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৬৫২টি।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, নজরুল ইসলাম বাবুল শুরুতে যে অবস্থান তৈরি করেছিলেন তা ধরে রাখতে পারলে হাতপাখা ও বাসগাড়ি প্রতীকের ভোট তাঁর বাক্সে যেত। এতে হাড্ডাহাড্ডি ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে পারতেন তিনি। নৌকাবিরোধী ভোটব্যাংক কাজে লাগাতে পারলে দুবার অংশ নিয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া জাতীয় পার্টি এবার মেয়র পদে চমক দেখিয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারত- এমনটাও মনে করছেন অনেকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর