শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রত্যাশা বাড়ছে দুই সিটিতে

বড় জয়েও চ্যালেঞ্জ বেড়েছে লিটনের

রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

টানা দ্বিতীয়বার রাজশাহীর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তিনি। এ জয় যেমন তার জন্য আনন্দের, তেমনি চ্যালেঞ্জের। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হবে তার জন্য। তবে এ জয় রাজনৈতিকভাবে লিটনের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শাহ আজম বলেন, এই মেয়াদে লিটনের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে উন্নয়ন ধারাবাহিকতা ধরে রাখা ও নতুন প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন। লিটনকে অতিক্রম করতে হবে তার আগের অর্জনকে। তিনি যে উন্নয়নের ধারা রচনা করেছেন, এখন সেটা অতিক্রম করে নতুন ধারা সৃষ্টি করতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত পাঁচ বছরের উন্নয়ন মডেলে তার ওপর আস্থা রেখেছেন মানুষ। সেই কাজ এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান, নগরের আয়তন বাড়ানো জরুরি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের এবার একটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। যে সুযোগটা রাজশাহীর মানুষের নেই। কিন্তু রাজশাহীর অবকাঠামোগত অবস্থান যা, তাতে রপ্তানিমুখী কর্মসংস্থান খুব দুরূহ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক প্রণব পাণ্ডে বলেন, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের প্রতি এখন মানুষের পর্বতসম প্রত্যাশা। বিশেষ করে নির্বাচনী ইশতেহারে ৫০ হাজার কর্মসংস্থানের কথা তিনি বলেছেন, এটা একটা মানসিক চ্যালেঞ্জ। অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, গুটিকয়েক রাজনৈতিক দল ছাড়া অন্যরা এ নির্বাচনে আসেনি। তারপরেও ভোট পড়েছে ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ। যা লিটনের প্রতি মানুষের আস্থার প্রতিফলন। এই ভোট দল ও দলের বাইরের রাজনীতিতে লিটনের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।

অধ্যাপক প্রণব পাণ্ডে বলেন, এত বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচনে নেই, তারপরও ৫০ ভাগের বেশি ভোট বড় একটা বিষয়। এখান থেকে মনে হয় লিটনের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করেছে। শুধু রাজশাহীর রাজনীতিতে না, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে তাকে হয়তো আরও শক্তিশালী অবস্থানে দেখা যাবে।

বাবা-মায়ের সমাধিতে শ্রদ্ধা : নির্বাচনে জয় লাভের পর মেয়র লিটন তার বাবা জাতীয় নেতা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও মা জাহানারা জামানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। মহানগরীর কাদিরগঞ্জে গতকাল শহীদ কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন তিনি। মেয়র লিটনের স্ত্রী, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহীন আকতার রেনীসহ মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লিটন বলেন, জনগণ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন, আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও ছেলে মেয়েদের কর্মসংস্থানের জন্য আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলে রাজশাহীতে শিল্প কারখানা গড়ে তোলার চেষ্টা করব। এরপর তিনি নগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান। সেখানে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। পরে সর্বস্তরের জনতা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

জামানত হারালেন তিন মেয়র প্রার্থী : সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে পরাজিত হওয়া তিন প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বেসরকারি ফলাফলে জানা যায়, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ২৯০। লিটনের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলনের মুরশিদ আলম ফারুকী পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪৮৩ ভোট। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের সাইফুল ইসলাম স্বপন পেয়েছেন ১০ হাজার ২৭২ ভোট এবং জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের লতিফ আনোয়ার পেয়েছেন ১১ হাজার ৭১৩ ভোট।

নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের অন্তত এক ভাগ ভোট কোনো প্রার্থী না পেলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। নির্বাচনে চার মেয়র প্রার্থী মোট ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৮ ভোট। প্রাপ্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ২৪ হাজার ৪৫৭ ভোট। কিন্তু লিটন ছাড়া অন্য কোনো মেয়র প্রার্থী এই পরিমাণ ভোট পাননি। এ কারণে তারা জামানত হারিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর