রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প

জমির বেগ, ফেনী

হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প

প্লাস্টিক পণ্যের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প। ফেনী সদর ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের পাল সম্প্রদায়ের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা শহরের পাশাপাশি গ্রামেও কমে গেছে।

কালের বির্বতন আর শিল্পায়নের যুগে সাতপুরুষের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে। আজও দৌলতপুর গ্রামের পাল সম্প্রদায়ের মৃৎশিল্পী ও তাদের পরিবার সাতপুরুষের পেশাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে। প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের দাপটে পাল সম্প্রদায়ের মৃৎশিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত মৃৎশিল্পীরা দিশাহারা হয়ে পড়েন। অনেকে সাতপুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর পালপাড়ায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। আগে এ ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে মাত্র ১৩ থেকে ১৪টি পরিবার সরাসরি মৃৎশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। এই পেশায় ভর করেছে অভাব অনটন। পয়লা বৈশাখ ও মেলা পার্বনেও তেমন চাহিদা নেই মাটির তৈরি তৈজসপত্রের। আগে মাটির কলসি, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, মটকা, দই পাতিল, মুচি ঘট, মুচি বাতি, মিষ্টির পাতিল, রসের হাঁড়ি, ফুলের টব, জলকান্দা, মাটির ব্যাংক, প্রতিমা, বাসন ও মাটির খেলনাসহ ৮০ ধরনের সামগ্রী তৈরি হতো। বর্তমানে অতিরিক্ত দামে জ্বালানি ও দূরদূরান্ত থেকে মাটি ক্রয় করার কারণে মাত্র সাত থেকে আট ধরনের মাটির তৈজসপত্র তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে এখানকার স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা। আগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে এখানকার কুমারপাড়া থেকে মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেতেন। মৃৎশিল্পীরা তাদের হাতের স্পর্শে মাটির সামগ্রীতে ফুটিয়ে তুলতেন মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের অনুভূতি ও প্রেম-বিরহের নানা দৃশ্যপট। কালের পরিক্রমায় বাহারি ডিজাইনের দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক, স্টিল, চিনামাটি, মেলামাইন, বিদ্যুৎচালিত রাইস কুকার, সিরামিক ও সিলভারের তৈরিকৃত জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা নেই বললেই চলে। বাজারে প্রচলিত প্লাস্টিক সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে তারা এখন কোনঠাসা। ফলে গ্রামবাংলার এই শিল্পের ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি তাদের দুর্দিন যাচ্ছে।

দৌলতপুর গ্রামের পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা জানান, বংশপরম্পরায় তাদের পেশা মৃৎশিল্পের সঙ্গে তারা এখনো জড়িত আছেন। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। মাটির তৈজসপত্র বানানোর প্রধান উপকরণ এঁঢেল মাটি অতিরিক্ত দামে ছাগলনাইয়া থেকে সংগ্রহ করার কারণে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

একই গ্রামের পালপাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠ মৃৎশিল্পী স্বপ্না রানী পাল জানান, গত কিছুদিন আগের পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে মাটির তৈরি খেলনা তিনি বিক্রির উদ্দেশ্যে বানিয়েছিলেন। কিন্তু মাটি ও খড় বেশি দামে কেনার কারণে খেলনার বিক্রয়মূল্য বেড়ে যায়। ফলে বেশির ভাগ খেলনা বিক্রি করতে পারেননি। এতে পুঁজিও উঠাতে পারেন নি।

সরকার এ শিল্পের জন্য আলাদা ব্যাংক ঋণ, সরকারি-বেসরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করলে মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ ও মৃৎশিল্পীরা।

এ প্রসঙ্গে ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, মৃৎশিল্পীদের জন্য সরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে উপজেলার পক্ষ থেকে সরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর