সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

টিলার নিচে ঝুঁকিপূর্ণ বাস

সিলেটে ঝুঁকিতে ১০ হাজার পরিবার, বাস্তুহারাদের আশ্রয় দেন প্রভাবশালীরা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

টিলার নিচে ঝুঁকিপূর্ণ বাস

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের ঠাকুরেরমাটি গ্রামে টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন স্থানীয় লোকজন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত জেলা সিলেট। একসময় সিলেট জেলাজুড়ে ছিল উঁচু উঁচু পাহাড় আর টিলা। কিন্তু নির্বিচারে মাটি কাটার কারণে এখন পাহাড়-টিলাগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। নানা কৌশলে মাটি কেটে সমতল করে এসব পাহাড়-টিলার পাদদেশে নির্মাণ করা হচ্ছে বসতি। অনেক স্থানে প্রভাবশালীরা দখলদারিত্ব ও টিলা কাটা অব্যাহত রাখতে পাদদেশে কাঁচা ঘরবাড়ি করে দিয়েছেন বাস্তুহারা লোকজনদের। সরকারি হিসাবে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের এসব পরিবারের কোনো তালিকা না থাকলেও এই সংখ্যা ১০ হাজারের ওপরে বলে জানা গেছে। সারা বছর টিলার পাদদেশে বসবাসকারী এসব পরিবার নিয়ে কোনো মাথাব্যথা না থাকলেও বর্ষা এলেই বেড়ে যায় আতঙ্ক। বিশেষ করে টিলা ধসে প্রাণহানির পর টনক নড়ে প্রশাসনের। এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় টিলাধস শুরু হয়েছে। গত শনিবার জৈন্তাপুরে টিলা ধসে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ তিনজন আহত হয়েছেন। গত বছর টিলা ধসে জৈন্তাপুরে একই পরিবারের চারজনের প্রাণহানি ঘটেছিল।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই সিলেটের পাহাড়-টিলার পাদদেশে বসবাসকারীদের মধ্যে বাড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। অতিবর্ষণে টিলা ও পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটে। গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে টানা ভারী বর্ষণ হওয়ায় পাহাড়-টিলা ধসের শঙ্কা বেড়ে গেছে। গত শনিবার জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের ঠাকুরেরমাটি পশ্চিমচটি গ্রামে টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। অতিবৃষ্টির ফলে গ্রামের জয়নাল মিয়ার বসতঘরের ওপর টিলা ধসে পড়ে। এতে মাটি চাপা পড়ে জয়নাল মিয়ার চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ফাতেহা বেগমসহ পরিবারের তিন সদস্য আহত হন। জয়নাল মিয়া জানান, ‘দুপুরে আমার স্ত্রী রান্না করছিলেন। হঠাৎ করে বসতঘর সংলগ্ন টিলা ধসে পড়ে। এতে আমার স্ত্রী মাটি চাপা পড়েন। পাড়া-প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় আমার স্ত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। এ ঘটনায় আমার পরিবারের তিনজন আহত হন।’ গত বছর সিলেট সদর, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জে টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হন। গত ১০ বছরে সিলেটে এভাবে টিলা ধসে ২১ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কোথাও টিলা ধসে দুর্ঘটনার আগে প্রশাসনের কর্মকর্তারা থাকেন ঘুমে। কোথাও টিলাধস বা প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করা কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ বাসস্থান ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশাসনের এই নির্দেশে কেউই কর্ণপাত করে না। নিরাপদ আশ্রয় না থাকায় আতঙ্ক নিয়েই তারা থেকে যান টিলার নিচের বসতিতে।

সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা রোধে যেসব উপজেলায় টিলা ও পাহাড়ের পাদদেশে লোকজন বসবাস করে সে সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে লোকজনকে সচেতন করছেন। সূত্র জানায়, সিলেট নগরী ও সদর উপজেলাসহ জেলার গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রায় ৪০০ পাহাড়-টিলা রয়েছে। যদিও এ-সংক্রান্ত কোনো পরিসংখ্যান জেলা প্রশাসনের কাছে নেই। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় টিলার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। বেলার সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আখতার জানান, সিলেট নগরী ও সদর উপজেলায় ২০০ টিলা রয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় আরও দুইশর ওপরে টিলা আছে। এসব টিলার কোনোটি সম্পূর্ণ, কোনোটি আংশিকভাবে কেটে ফেলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর