সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ধরাছোঁয়ার বাইরে গডফাদাররা

খুলনার পাড়া-মহল্লায় ইয়াবা বিক্রির পয়েন্ট, নামমাত্র অভিযান পুলিশের

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

ধরাছোঁয়ার বাইরে গডফাদাররা

খুলনায় ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন মাদকের গডফাদাররা। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা মাদক নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বললেও তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। উপরন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতায় নির্বাচনের সময় চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দিলেও এখন এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। বিভিন্ন পাড়ামহল্লায় মাদক বিক্রির পয়েন্ট তৈরি করে প্রকাশ্যে কেনাবেচা চলছে।

মেট্রোপলিটন পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসে নগরীর আটটি থানায় দায়ের হওয়া ২৭০টি মামলার অর্ধেকই মাদক সংক্রান্ত। অভিযানে পাচারকারীরা কেউ ধরা পড়লেও কৌশল বদল করে মাদক ব্যবসায়ীরা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীতে কমবয়সী বখাটেদের মাদক বিক্রির কাজে ব্যবহার করেন ব্যবসায়ীরা। মাদকবিক্রির পয়েন্ট ঘিরে বখাটেদের কয়েক স্তরের আড্ডাসহ বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করা হয়। কেএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শেখ ইমরান বলেন, প্রায় প্রতিদিনই মাদকসহ বিক্রেতারা গ্রেফতার হচ্ছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই পাচারকারী কিংবা খুচরা বিক্রেতা। এর পেছনের গডফাদার যারা আছেন তারাও নজরদারিতে আছে। বিভিন্ন মামলায় তারাও আসামি হয়। মাদক নির্মূলে পুলিশ অ্যালার্ট আছে, এরপরও ইয়াবা চক্রের নেটওয়ার্ক ভাঙা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সর্বশেষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুত করা শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মদদদাতা হিসেবে তালিকায় খুলনার কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা, কয়েকটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সহযোগী স্বজনদের নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু পুলিশ পদক্ষেপ না নেওয়ায় মাদক বিক্রি বন্ধ হয়নি। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের সংশ্লিষ্টতা সহযোগিতা ছাড়া মাদক ব্যবসা চালানো কিংবা বিভিন্ন স্থান থেকে খুলনায়    মাদকের চালান আনা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর না হলে মাদক প্রবেশ কিংবা ব্যবসা  ঠেকানো সম্ভব নয়। ক্যারিয়াররা (বহনকারী) গ্রেফতার হয় কিন্তু যারা গডফাদার তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায় না। অনেক স্থানে মাদকের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নামও উঠে এসেছে। মাদক নির্মূল করতে পৃষ্ঠপোষক গডফাদারদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তা (প্রসিকিউটর) শাহিন পারভিন জানান, ২৬ জুন সোনাডাঙ্গার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ৭০০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশের একজন কনস্টেবল গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর বাইরে মাদক ঠেকাতে রেগুলার অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে মাদক পুরোপুরি নির্মূলে সবার সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে কেসিসির নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, রাজনৈতিকভাবে মাদক নির্মূলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলরদের ডেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চেষ্টা তো করি তারপর দেখা যাক কী হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর