মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশসেরা কলেজে সংকটের শেষ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

দেশসেরা কলেজের তালিকায় টানা চারবার নাম রাজশাহী কলেজের। তারপরও নানা সংকট প্রতিষ্ঠানটিতে। শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক, আবাসন সংকট; যেন সংকটের শেষ নেই। সংকট দূর করা গেলে প্রতি বছরই দেশসেরা হওয়ার যোগ্যতা রাখে এই কলেজ। শিক্ষার পরিবেশ, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অনুপাত, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, স্নাতক শিক্ষার্থীর সংখ্যা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ ৩১টি মানদণ্ডে দেশের অন্য কলেজের তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকলেও কলেজটিতে আছে নানা সীমাবদ্ধতা। বছর বছর শিক্ষার্থী বাড়লেও সেই তুলনায় বাড়ছে না অবকাঠামো।

রাজশাহী কলেজে ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে মাত্র ১২৫টি শ্রেণিকক্ষে। যেখানে ১০০ শিক্ষার্থীর জন্য একটি শ্রেণিকক্ষ থাকার কথা, সেখানে কলেজটিতে ২০৮ শিক্ষার্থীর জন্য আছে মাত্র একটি কক্ষ। এই শ্রেণিকক্ষ সংকট কাটাতে দশ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের টানাপোড়েনে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে নির্মাণকাজ। কলেজটিতে আবাসন সংকটও প্রকট। প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধা পায় না। ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসনে আছে মাত্র তিনটি ছাত্রাবাস। সেখানে মাত্র ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। ছাত্রাবাসগুলোর অবস্থাও নাজুক। ফলে ঝুঁকি নিয়েই এসব ছাত্রাবাসে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য হেমন্ত কুমারী ছাত্রাবাস নির্মিত হয় ১৮৯৯ সালে। ১২৩ বছরের পুরনো এই ছাত্রাবাসের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ।

মুসলিম ছাত্রাবাসের বয়সও ১০০ ছাড়িয়েছে। মুসলিম ও হেমন্ত কুমারী এই দুই ছাত্রাবাসে ৬০০ শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। মুসলিম    ছাত্রীদের জন্যও আছে রহমতুন্নেসা নামে একটি ছাত্রীনিবাস। সেখানে নতুন-পুরনো পাঁচ ভবন মিলিয়ে মাত্র ৬০০ আসন আছে। যা কলেজের ছাত্রী সংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে ছাত্রাবাসে ঠাঁই না পেয়ে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা বা মেস ভাড়া করে থাকেন। এতে মাঝেমধ্যেই নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েন তারা। বাইরে থাকা এসব শিক্ষার্থীর যাতায়াতে কলেজের বাসের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য ১৪টি বাস থাকলেও নিজস্ব বাস আছে মাত্র একটি। কলেজটিতে ফাইন্যান্স ও মার্কেটিং বিভাগে স্নাতক, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী আছে। কিন্তু কোনো নিয়মিত শিক্ষক নেই। ২০১২ সালে শুরু হয়ে ১০ বছর পার করলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। বিভাগ ?দুটোর কার্যক্রম চালানো হয় অতিথি শিক্ষক দিয়ে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে কলেজটিতে শিক্ষক আছেন ২৪১ জন। কিন্তু দুটি বিভাগের নিয়মিত শিক্ষক না থাকায় এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর ক্লাস নিতে বিপাকে পড়তে হয়।

এ ছাড়াও দুজন গ্রন্থাগারিক ছাড়া স্থায়ী কোনো কর্মকর্তা নেই কলেজটিতে। আগে কয়েকজন ল্যাব সহকারী থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ না থাকায় সে পদগুলোও ফাঁকা আছে। দুই শতাধিক কর্মচারী থাকলেও স্থায়ী নিয়োগ আছে মাত্র ১৫ জনের। বাকিরা কাজ করছেন চুক্তিভিত্তিক। কলেজের লাইব্রেরিতে ৭৮ হাজারের বেশি বই থাকলেও শিক্ষার্থীদের বই পড়ার মতো জায়গা নেই। লাইব্রেরি আর অডিটোরিয়াম একসঙ্গে হওয়ায় সেখানে পড়ার পরিবেশও নেই। ফলে লাইব্রেরিতে আসার আগ্রহ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল খালেক বলেন, ‘কলেজের সংকট কাটাতে অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন দরকার। কিন্তু ব্যবহার উপযোগী জায়গা না থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। দশ তলা ভবনের কাজ শেষ হলে শ্রেণিকক্ষ সংকটের সমাধান হবে। এ ছাড়াও আড়াই শ আসনের নতুন হিন্দু ছাত্রাবাসের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো উত্তর পাইনি। সেটা হলে আবাসন সমস্যাও কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর