সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু চিকিৎসায় ভোগান্তি

সেল সেপারেটর যন্ত্র নেই বরিশাল ও খুলনায়, রোগীদের পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও খুলনা

ডেঙ্গু চিকিৎসায় ভোগান্তি

ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র না থাকায় রোগীর অবস্থার একটু অবনতি হলেই বরিশাল শ্বের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শ্বেবাচিম) থেকে তড়িঘড়ি করে তাদের ঢাকায় প্রেরণ করছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, শুধু শ্বের-ই বাংলা মেডিকেলেই নয়, বরিশাল বিভাগের কোনো সরকারি হাসপাতালে ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র নেই। এ কারণে যাদের রক্তের প্লাটিলেট ভেঙে যায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করতে হচ্ছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের ছোটখাটো সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। অচিরেই তাদের সংকট দূর হবে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ যন্ত্রটি সরবরাহ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে একাধিক চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এখনো সারা পাওয়া যায়নি। ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র পেলে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সংকট কাটবে বলে তিনি জানান। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বরিশালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত তিন দিনের ব্যবধানে ডেঙ্গু রোগী দ্বিগুণ বেড়ে সবশ্বেষ চিকিৎসাধীন আছেন চলতি মৌসুমের সর্বাধিক ৮৪ রোগী। গত কয়েকদিন ডেঙ্গু রোগীদের সাধারণ রোগীর পাশ্বে রাখা হলেও গতকাল তাদের একই ফ্লোরে আলাদা কক্ষ দেওয়া হয়েছে। নানা সংকটে আছেন ডেঙ্গু রোগীরা। ডাকলেও ডাক্তার-নার্স কাছে যায় না তাদের। নোংরা পূতিদুর্গন্ধময় ওয়ার্ডগুলো মশার অভায়স্থলে পরিণত হয়েছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের কিছু ওষুধ দেওয়া হলেও বেশিরভাগ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। 

দুই বছর ধরে সেল সেপারেটর মেশিন নেই খুলনায় : খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১৯ ডেঙ্গু রোগী। এর আগে শনিবার ছিল ২১ রোগী। এদিকে রোগীর চাপ সামলাতে গতকাল হাসপাতালে চতুর্থ তলায় একটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে আলাদা পাঁচটি ইউনিটে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ রোগী ঢাকা ও খুলনার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। অপরদিকে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্রের ব্যবস্থা করা হয়নি। এর মাধ্যমে রক্তের প্লাটিলেট (অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে) আলাদা করে ডেঙ্গু রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়।

খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসায় সীমিত পরিসরে একটি পুরুষ ও একটি মহিলা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। চিকিৎসক-নার্সদের একটি টিম ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করছেন। তবে যেসব রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে এফারইসিস মেশিন হলে ভালো হয়। এসব রোগীকে শুধু রক্তের প্লাটিলেট দেওয়া লাগে। কিন্তু প্লাটিলেট আলাদা করার মেশিন নেই। ২০২১ সাল থেকে সেল সেপারেট মেশিন নষ্ট পড়ে আছে। যা অকেজো ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. জিল্লুর রহমান তরুণ জানান, রক্তের অন্যান্য উপাদান থেকে প্লাটিলেট আলাদা করে ডেঙ্গু রোগীদের দিতে হয়। কিন্তু এই মেশিন না থাকায় বিকল্প হিসেবে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সাপোর্ট নিতে হচ্ছে রোগীদের। তিনি বলেন, সেল সেপারেটর মেশিন ও আধুনিক এফারইসিসি মেশিনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন করা হয়েছে। মেশিনটি থাকলে রোগীকে রক্তের প্রয়োজনীয় অংশটুকু দেওয়া সম্ভব হবে।চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত খুমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৬ রোগী। এর মধ্যে শুক্রবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৬ জন ও বৃহস্পতিবার ১৯ জন।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর