সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

কারিগরি ত্রুটির কারণে জন্ম মৃত্যু নিবন্ধনের তথ্য নষ্ট

হাই কোর্টে প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন মাস অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকা এবং কারিগরি ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য ডাটাবেজ থেকে নষ্ট হয়েছে বলে হাই কোর্টকে জানিয়েছে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়। গতকাল হাই কোর্টে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করে এ কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্ভার থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন (বিডিআরআইএস) তথ্য-উপাত্ত উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছিল, তা ঠিক নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, দায়িত্বে থাকা নিবন্ধকদের অনেকে হাতে লেখা নিবন্ধনের তথ্য-উপাত্ত অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করতে না পারার কারণে তা সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী রেজিস্ট্রার জেনারেল সামিউল ইসলাম রাহাদ স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনটি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। এ সময় রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।

পরে আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, নির্দেশ অনুযায়ী জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। কিন্তু সেটি অসম্পূর্ণ হওয়ায় আগামী ১০ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।

হাই কোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, জন্মনিবন্ধন তথ্য ২০১৩ সালের ৩০ জুনের মধ্য বিআরআইএস সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিবন্ধকদের অনুরোধ করা হলেও অনেক নিবন্ধক কার্যালয়ই তা করেননি। এ অবস্থায় ২০১৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে ব্যবহারকারীর চাপে বিআরআইএস সফটওয়্যার আইডি অকার্যকর হয়ে পড়ে। তিন মাস অকার্যকর অবস্থায় থাকায় অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ বন্ধ ছিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুধু তাই না, কারিগরি ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য ডাটাবেজ থেকে বিনষ্ট হয়ে যায়। এ পর্যায়ে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসতে থাকলে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) থেকে একটি উন্নতমানের সার্ভার বরাদ্দ নেওয়া হয়। পরে ইউনিসেফের সহায়তায় একজন ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্টও নিয়োগ দিয়ে সার্ভারটি সচল করা হয়। তখন পর্যন্ত ১৪ কোটির বেশি মানুষের তথ্য-উপাত্ত নতুন সার্ভারে স্থানান্তর করা হয়। স্থানান্তরের পর সিস্টেমটি অটো বেকআপসহ চালু করা হয়।  প্রতিবেদনের শেষ অংশে বলা হয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নম্বরটি সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। তাই যেসব জন্মনিবন্ধন সনদ অনলাইনভুক্ত হয়নি সেসব জন্মনিবন্ধন সনদে যে নিবন্ধন নম্বর ছিল তা হুবহু ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই নতুন করে জন্মনিবন্ধনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে নাগরিকদের ভোগান্তি ও সার্ভারে জন্মনিবন্ধনের তথ্য না থাকা নিয়ে গত বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন যুক্ত করে পরে হাই কোর্টে রিট করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর গত বছর ২৯ মে রুলসহ আদেশ দেন হাই কোর্ট। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন তথ্য-উপাত্ত উধাওয়ের অভিযোগ অনুসন্ধান বা তদন্তের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টদের এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। হাই কোর্টের এ আদেশের পর গত বছর ৪ অক্টোবর একজন উপরেজিস্ট্রার জেনারেলকে (প্রশাসন) আহ্বায়ক ও একজন সহকারী রেজিস্ট্রার জেনারেলকে সদস্য সচিব করে চার সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এ কমিটির পর্যবেক্ষণ, মতামতের ভিত্তিতে দেওয়া প্রতিবেদনটি গতকাল হাই কোর্টে উপস্থাপন করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর