বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশের বড় নৌঘাঁটি বানৌজা শের-ই-বাংলার যাত্রা শুরু

রাশেদ হোসাইন, কলাপাড়া, পটুয়াখালী থেকে

দেশের বড় নৌঘাঁটি বানৌজা শের-ই-বাংলার যাত্রা শুরু

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি বানৌজা শের-ই-বাংলা এবং ৪টি জাহাজ ও ৪টি এলসিইউর কমিশনিং অনুষ্ঠানে অধিনায়কদের কাছে কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন -পিআইডি

ত্রিমাত্রিক সক্ষমতার অংশ হিসেবে এবার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এভিয়েশন ও নবীন নাবিকদের প্রশিক্ষণ সুবিধাসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংবলিত নৌঘাঁটি বানৌজা শের-ই-বাংলার যাত্রা শুরু হয়েছে। গতকাল পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এ নৌঘাঁটি কমিশনিং করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত চারটি পেট্রোল ক্রাফট ও চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটিরও (এলসিইউ) কমিশনিং করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও টেলিকনফারেন্সের (ভিটিসি) মাধ্যমে কমিশনিং করেন। পরে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ঘাঁটির অধিনায়ক কমডোর এম মহব্বত আলীর হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। এরপর বাহিনীর রীতি অনুযায়ী নামফলক উন্মোচন করা হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নতুন ঘাঁটি শের-ই-বাংলা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পায়রাবন্দরসহ উপকূলীয় এলাকার সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে জানা যায়। এ ছাড়াও নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌ-সদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এই ঘাঁটি। বছরে দুবার ৮০০ করে মোট ১৬০০ নাবিকের প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে এ ঘাঁটিতে। পাশাপাশি সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষায়, বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার দেশি ও বিদেশি ব্যবসা-বাণিজ্য নিরাপত্তায় একটি বিশেষায়িত ও স্থায়ী ঘাঁটির গুরুত্ব বিবেচনায় ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ বাস্তবায়নে এই ঘাঁটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটির নামফলক উন্মোচিত হয়। আধুনিক সব সুবিধায় ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ঘাঁটিতে গড়ে তোলা হয়েছে নবীন নাবিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এর পাশাপাশি রয়েছে অপারেশনাল কার্যক্রমের সুবিধার্থে প্রশাসনিক ভবন, এভিয়েশন সাপোর্ট ও হ্যাঙ্গার সুবিধার মাল্টিপারপাস শেড, বিভিন্ন রিপেয়ার ও মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ।

এ ছাড়া ঘাঁটিতে ডাইভিং স্যালভেজের কমান্ডো পরিচালনা সংবলিত ইউনিট, নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল রয়েছে।

নৌবাহিনীর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি পেট্রোল ক্রাফট স্কোয়াড্রনের চারটি যুদ্ধজাহাজ হলো- বানৌজা শহীদ দৌলত, শহীদ ফরিদ, শহীদ মহিবুল্লাহ ও শহীদ আখতার উদ্দিন এবং চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউটিলিটি (এলসিইউ) বানৌজা ডলফিন, তিমি, টুনা ও পেঙ্গুইনের কমিশনিং করা হয়। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হলো।

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডে নির্মিত চারটি পেট্রোল ক্রাফট নৌবহরে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার সুরক্ষা আরও সুদৃঢ় হবে। এ ছাড়া নবনির্মিত এলসিইউগুলো আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের আওতায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে চট্টগ্রাম থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর ও তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। পাশাপাশি এলসিইউগুলো জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সব ধরনের সহায়তা কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। নবনির্মিত এসব জাহাজ ও ঘাঁটি কমিশনিংয়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলে অবৈধ মৎস্য আহরণ রোধ, চোরাচালান দমন, মানব পাচার রোধ, জলদস্যুতা ও মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর